নাটোর প্রতিনিধি- নাটোরের সিংড়া উপজেলার লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে বেকার তরুণ তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।চাকরি দেওয়ার নামে এলাকার অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। প্রতারণা এবং অধ্যাপক না হয়ে নিজেকে অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় এলাকাবাসী তার নাম রেখেছেন ”ভেজাল কালাম ” স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বির্তকিতদের কমিটিতে না রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও ভেজাল কালামকে সাধারণ সম্পাদক থেকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয়েছে ইউনিয়ন সভাপতি । সভাপতি হওয়ার পর থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের কালী মন্দিরের সম্পত্তি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি । ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবুল কালাম আজাদের শাস্তির দাবীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ,আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, দূর্ণীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ বরাবরে গণ আবেদন করা হয়েছে ।
লালোর ইউনিয়নে গিয়ে জানা গেছে,ইউনিয়ন আঃলীগের সাধারণ স¤পাদক থাকাকালে আবুল কালাম আজাদকে টাকা দিয়ে দুই চারজনের চাকরি হয়েছে ।আবার চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে পাচ্ছেন না, এমন অন্তত ১০ জন এ প্রতিবেদকের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। পাঁচজনকে পাওয়া গেছে, যাঁরা অনেক দেনদরবারের পর আংশিক টাকা ফেরত পেয়েছেন। আবার সিংড়া থানায় মুচলেকা দিয়েই টকা পরিশোধ না করে উল্টো পাওনাদারকে হুমকি ধামকি এবং পুলিশ দিয়ে হুয়রানীর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে ।
২০১২ সালে লালোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু শিক্ষক ও দপ্তরী নিয়োগে হয় ।সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভেজাল কালাম স্থানীয় ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগের নামে প্রতারণা ফাঁদ পেতে বসে । শিক্ষক দপ্তরী নিয়োগের দেওয়ার নামে স্থানীয় শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে সরাসরি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে ।সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার নামে।
তার প্রতারণার শিকার সত্তোর্ধ বৃদ্ধ হাজী সদর উদ্দীন বলেন, ২০১২ সালে ছেলের বউকে ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে চাকরির জন্য জমি বিক্রি করে কালামকে ৬লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন। দুই বছর তার পিছনে ঘোরার পর চাকরি দিতে না পারলেও টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে।”পরে ২০১৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিংড়া থানায় প্রতারণার লিখিত অভিযোগ করলে কালাম থানা উপস্থিত হয়ে এক মাসের মধ্যে সমূদয় টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে সহস্তে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে । ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আজো তিনি টাকা ফেরত পায়নি । টাকা ফেরত চাইলে ভেজাল কালাম এবং তার অনুগতরা হুমকি ধামকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি অশীতিপর বৃদ্ধ সদর উদ্দীনসহ পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার পর্যন্ত করিয়েছে ।
একইভাবে তিনি (কালাম)সিংড়া উপজেলার নগর মাঝগ্রাম পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক আমির চাঁদের ছেলে আহসান হাবিবকে ডাঙ্গাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা নেন ।নলবাতা গ্রামের জনৈক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে শাহাবুদ্দিন কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেন ।পরবর্তীতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাঈদ আহম্মেদ পলকের মধ্যস্থতায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত পেলেও এখনো ৫০ হাজার টাকা পায়নি । একই কায়দায় ডাকমন্ডপ গ্রামের কাউছার হোসেনের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা । মটগ্রামের দরিদ্র কৃষক ফরিদের ছেলেকে ফারুক হোসেনকে মার্কেনটাইল ব্যাংকে পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নেন চল্লিশ হাজার টাকা । তার মা চা দোকানী জাহানারা বেগম জানান, এত টাকা প্রতারিত হওয়ার পর আর্থিক অনটনের মধ্যে তাদের সংসার চলছে।
হাঁপানিয়া গ্রামের আমির হোসেনের কাছ থেকে ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন । কিন্তু এতদিনেও সেই চাকুরি হয়নি। তিনি কালামের বাড়িতে গিয়ে বার বার টাকা চাইলে তাকে নানা ভাবে অপদস্ত করছে। টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো তাকে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি স্থানীয় নেতা থেকে জেলা নেতৃত্বে অনেক মানুষের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুবিচার পাননি।
সম্প্রতি ভেজাল কালাম এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী ডাকমন্ডপ কালীমাতার মন্দির মার্কেটে গিয়ে জনসম্মুখে ব্যবসায়ীদের গিয়ে হুমকি দেন এখানে কোন দোকান থাকবে না এবং মন্দির রাখা হবেনা । সব কিছু গুড়িয়ে দেয়া হবে । অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যবসায়ীরা মার্কেট বন্ধ করে দেয় । পরে সিংড়া থানায় সমঝোতায় বসলে তিনি মন্দিরের সেবায়েত এবং নাটোর আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট বিলাস চন্দ্র সরকারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় । তারপর থেকে লালোর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লালোর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে চাকরি না পাওয়া, টাকা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ অনেকেই করেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের ভেতরে ক্ষোভ আছে। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন,দলেরই একাংশের তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট ।