একবিংশ শতাব্দীতে ছেলেদের থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই মেয়েরা।সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারী আজ পুরুষের সহযোদ্ধা হয়ে সর্বত্র কাজ করছে। তারা পাল্লা দিয়ে এরোপ্লেন,ট্রেন, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল চালাচ্ছে, এমনকি বাসও। তবে ডালমিল মেরামত এমন একটা পেশা যেখানে এতদিন পুরুষরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু এবার হয়ত কমতে চলেছে পুরুষদের সেই একচ্ছত্র প্রাধান্যও। তেমনি আরেক বিরল ঘটনার দেখা মিলল, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।রজুফা বেগম (৫৫) হলেন বাংলাদেশের প্রথম ডাল মিলের নারী হেডমিস্ত্রী । গত ২৫ বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন ডাউল মিলে মেরামতের কাজ করে চলেছেন। ৮ বছর ধরে হেডমিস্ত্রী হিসেবে বানেশ্বরে অবস্থিত সুফিয়া ডালমিলের চারটি ইউনিটের মেরামতের কাজ তিনি একায় করে থাকেন ।পাশাপাশি আশেপাশের মিলগুলোর যান্ত্রিক ত্রুটি হলেও ডাক পরে রজুফা বেগমের । মাত্র ১২ ছর বয়সে রজুফার বিয়ে হয়ে যায় ।বিয়ের মাত্র ৫ বছরের মাথায় মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পারে ৫ বছরের ছেলে লাভলু এবং তিন বছরের মেয়ে সন্তান রোজিনার হাত ধরে চলে আসে বাবার বাড়িতে । দুই সন্তান নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছিল রজুফা।অনেক জায়গায় ঘুরেও কাজ জুটছিলনা তাঁর ।এ সময় বানেশ্বরের ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুস সোবাহান সরকার তাকে ডাল মিলে শ্রমিকের কাজ দেন । সেই থেকে শুরু । ডালমিল মেরামতে হেডমিস্ত্রীকে সহযোগিতা করতে করতেই নিজেই একদিন পাকা মিস্ত্রী হয়ে ওঠেন রজুফা বেগম ।এখন ডালমিলের সব মেরামতের কাজই করতে পারেন তিনি । এ কাজ করেই তিনি ছেলে মেয়ে বড় করেছেন ।বিয়ে দিয়েছেন ।পাঁচকাঠা জায়গা কিনে ছাদ ঢালাই পাকা বাড়ি করেছেন । বর্তমানে চারটি ডালমিলের মেরামতের সকল দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাশাপাশি ডালমিল মালিকের মিল সংলগ্ন গরুর খামার তিনি দেখাশোনা করেন ।সুফিয়া ডাল মিলের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম তাপস জানান,অনেক পুরুষ মিস্ত্রির চেয়েও ভালো কাজ করেন তিনি।শুধু ডালমিল চালনাই নয়, পাশাপাশি ডাল মিলের ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ক্রটি ওরক্ষণাবেক্ষণসহ ছোটখাটো মেরামতের কাজও করেন রজুফা ।হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও আমি একাজে অভ্যাস্ত হয়ে গেছি । ডাল মিলের সকল কাজ করি । আমার কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায় ৩০ জন নারী দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কাজ করছে । এ কাজ করে প্রতিমাসে ১৬ হাজার টাকা আয় করি । এখানে মেয়েদের অংশগ্রহণ আস্তে আস্তে বাড়ছে বলে মনে করছেন রজুফা। পরবর্তীতে আরো মেয়েরা আসবে বলে তিনি আশাবাদী। এই চ্যালেঞ্জিং পেশায় আনন্দের সঙ্গেই কাজ করেন রজুফা বেগম । ডাল মিলের মিস্ত্রীর কাজে নারী সহজে কেউ মেনে নিতে পারে না। একজন ছেলেই তো এ কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। একজন নারী কিভাবে করবে? এমন প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। কিন্তু আমি কাজ করে প্রমাণ দাও ।বানেশ্বর ডাল ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি ওবায়দুর রহমান জানান, আমাদের পুঠিয়া উপজেলায় মোট ২৫০ টি ডাল মিল আছে । এসব মিলের মধ্যে একমাত্র নারী হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম । আমার জানা মতে বাংলাদেশের ডালমিলগুলোর মধ্যে একমাত্র নারী হেডমিস্ত্রী রজুফা বেগম । তিনি পুরুষের তুলনায় মিল মেরামতের কাজ অনেক ভালো করতে পারেন ।