ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রবিউল (১৫)। সে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবছর নবম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে সফলতার সাথে পাশ করেছে সে। তবে দশম শ্রেণীতে আর ভর্তি হতে পারেনি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিউলের মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে গেছে। অপারেশন না করলে সে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। অপারেশন করাতে ৮০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু রবিউলের হতদরিদ্র বাবা-মার পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে রবিউলের বাবা-মা মানুষের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। রবিউলের বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার পুঙ্গলী ইউনিয়নের দত্তপুঙ্গলী গ্রামে। সে ওই গ্রামের কালু ফকিরের ছেলে ও পুঙ্গলী দাখিল মাদরাসার ছাত্র।
জানা যায়, রবিউলের বাবা একজন দিনমজুর। মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও ভ্যানগাড়ি চালিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ এবং চার ছেলে মেয়েকে স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করান তিনি। রবিউল ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। সেই গ্রামের একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মাদ্রাসা ছুটি থাকলেই সে নিজেও মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করে। তাই বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শীতকালীন ছুটিতে সে গ্রামে বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে দিনমজুরের কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে গত ২২ ডিসেম্বর গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে যায় সে। এদিন রফিকুল ইসলামের নারিকেল গাছে উঠে নারিকেল পাড়ার সময় গাছ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হয় রবিউল।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দ্রæত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে ভর্তি করা হলে রবিউলের মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানিয়ে চিকিৎসকরা দ্রæত অপারেশন করাতে বলেন। কিন্তু এর ব্যয় ৮০ হাজার টাকা তার পরিবার জোগাড় করতে না পারায় ২২ দিন পার হলেও রবিউলের অপারেশন হয়নি।
ঘটনার পরে রবিউলের বাবা নিকট আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামের মানুষের কাছে সহযোগিতা নিয়ে দশ হাজার টাকা জোগাড় করে। এঅবস্থায় বাকি সত্তর হাজার টাকা গোছাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রবিউলের পরিবারকে। অন্যদের সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই এতো টাকা জোগার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রবিউলের পিতা কালু ফকির।
রবিউলের মা বুলবুলি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেটা আমার কতদিন হলো হাসপাতালে পড়ে আছে। ডাক্তার বলেছে অপারেশন করাতে হবে। যার জন্য ৮০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু আমরা কোনো টাকা দিতে পারছিনা। মানুষের কাছে হাত পেতেও টাকা পাচ্ছিনা। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কেউ আমার ছেলেটারে বাঁচান।
পুঙ্গলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম মোস্তফা বলেন, রবিউল পড়াশুনায় বেশ ভালো। দারিদ্রতার কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে বিনা বেতনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। একটি দুর্ঘটনার কারণে রবিউলের পরিবার মহা বিপদে পড়েছে। তাই তিনি সমাজের বিত্তবানদের দরিদ্র এই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানান।