নাটোরের কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজার দেশের সর্বাধিক সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন। কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে মোট ৬৮টি পুরস্কারসহ সম্মাননা লাভ করেছেন যা বাংলাদেশে একজন কৃষি উদ্যোক্তার জন্য সর্বাাধিক। শনিবার বিএআরসি ভবনে বাংলাদেশ একাডেমী অব এগ্রিকালচার সেলিম রেজাকে স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে এই পুরস্কার প্রদান করেন। বাংলাদেশ একাডেমী অব এগ্রিকালচার এর সভাপতি এবং বিএআরসি’র চেয়ারম্যান ডঃ কাজী এম. বদরুদ্দোজার সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ এম আফজাল হোসেন, বিএআরসি এর নির্বাহী সভাপতি ডঃ শেখ মোঃ বখতিয়ার। সেলিম রেজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে সদর উপজেলার একটি মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি নিতান্তই সখের বসে গত ২০০০ সালে নিজ এলাকায় পৈত্রিক সামান্য জমি নিয়ে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি প্রথমে ২০০২ সালে ভেষজ শতমূল, মিছরি দানা, ঘৃতকুমারী ও শিমুলে চাষ শুরু করলেও ২০০৪ সালে দেশে প্রথম থাই ও আপেল কুল চাষ এবং ২০০৬ সালে দেশে প্রথম বারমাসী থাই পেয়ারার চাষ করে সফল হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি দেশের জন্য সারা বছর ব্যাপী বিভিন্ন দেশী-বিদেশী বিলুপ্ত ফলসহ হরেক রকম ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। দেশের লাখো মানুষের জন্য সেলিম এখন দৃষ্টান্ত। সেলিম রেজা কম্বোডিয়াতে আফসা, শ্রীলংকায় আইএমএফএমএপি, ভারতের কুচবিহারে নিরাপদ খাদ্যের ওপরে কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে, রাষ্ট্রপতির হাত থেকে কেআইবি কৃষি পদক, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, জাতীয় বৃক্ষরোপণ আন্দোলন ও ফলদ বৃক্ষমেলা পুরস্কার, জাতীয় সবজী মেলা পুরস্কার এবং দুইবার জাতীয় সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার লাভ করেন। সেলিম রেজা প্রথমে আহাম্মদপুরে নিজেদের সাড়ে চার বিঘা জমি নিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেও একের পর এক সফলতার পর তিনি নাটোরের বিভিন্ন জায়গায় অন্যের জমি লীজ নেয়া শুরু করেন। এখন তিনি প্রায় পৌনে দুইশ’ বিঘা জমি তাঁর চাষের আওতায় এনেছেন। এসব জমিতে কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বিদেশী সুস্বাদু ড্রাগন ফল, কলকাতা থেকে আনা কাঁটা বিহীন গোলাপ ও মেরুন রংয়ের গ্লাডিওলাস ফুল, বিদেশী রেড লেডী জাতের পেঁপে, মাটির আদ্রতা রক্ষায় দেশে প্রথম তাইওয়ান থেকে আনা মাল্চিং পেপার ব্যবহারে বিদেশী চেরী ফল, টমেটো, বিভিন্ন জাতের বাঁধা কপি ও স্ট্রবেরী সহ ফল ফুল ও সবজি চাষ করছেন। এখন তিনি পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের বারমাসী লেবু, লেট ভ্যারাইটি আম, (গৌরমতি, যাদুভোগ, বারী-৪, ও বান্দিগোড়), নিলুদ্দিন (বারি-১১), ব্রæনাই কিং, বারমাসী বেদানা, শরিফা, বাতাবী লেবু, বারমাসী কদবেল, খাটো জাতের অল্প সময়ে ফলনশীল (২ থেকে ৩ বছর) কেরালা হাইব্রিড নারিকেল, ভিয়েতনাম থেকে আনা সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও সিয়াম বøু কোকোনাট চাষ শুরু করে সফলতা পেয়েছেন। এছাড়াও সেলিম রেজা ফল উৎপাদনে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প ব্যবহার উপযোগী ও সাশ্রয়ী ব্যাগ ব্যবহারও শুরু করে দেশে অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের বিলুপ্ত প্রায় ও পুষ্টি সমৃদ্ধ বিষমুক্ত ফলগুলো মানুষ জাতে বার মাস খেতে পায় এটাই তাঁর পরিকল্পনা। একই সাথে তাঁর সাফল্যে দেশের লাখ লাখ মানুষের বেকারত্ব দুর হতে পারে বলেও তিনি আশা করেন।