দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশাল জেলার অন্যতম উপজেলা আগৈলঝাড়ায় আগাম ইরি-বোরো চাষে নেমেছে কৃষকরা। চলতি মৌসুমে কনকনে শীত উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে খালে পানি সেচের প্রতিবন্ধকতায় বাম্পার ফলন ব্যাহত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ হাজার ১শ’ ৪৮ মেট্রিক টন চাল। চাষযোগ্য জমির মধ্যে ৭ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান ও ১হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বোরো ধান আবাদ করা হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ২০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বোরোসহ মোট ১শ’ হেক্টর জমিতে আগাম চাষ শুরু করেছে চাষীরা। কনকনে শীত ও শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে গত ২৫দিন ধরে উপজেলার নীচু জমিগুলোতে শুরু হয়েছে আগাম ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ।
কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি ইরি-বোরো চাষের পুরো মৌসুমে সার ও সেচ কাজের জন্য সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে চলতি মৌসুমেও ইরি-বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কিন্তু বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদার মাহফুজ খান কর্তৃক সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য খালে দেয়া একাধিক বাঁধের কারণে তারা অন্যান্য বছরের মত এবছর পানি সঞ্চালন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন। খালের মধ্যের কাজ শেষ হলেও এক বছর আগে দেয়া বাঁধ ও বাঁধের আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম না সরানোর কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ২৬হাজার ৪শ’ ৮জন চাষীর পরিবার একমাত্র এক ফসলী ইরি-বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে পানি সংকটের কারণে জমি চাষাবাদ করতে না পারার আশঙ্কায় গৈলা ইউনিয়নের উত্তর শিহিপাশা গ্রামের কালাম মৃধা, ওসমান হাওলাদার ও মধ্য শিহিপাশা গ্রামের রব হাওলাদার কৃষি অফিস থেকে ভাড়া নেয়া সেচ পাম্প আবার অফিসে ফেরৎ দিয়েছেন।
সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও দীর্ঘদিনেও খালের মধ্যে দেয়া বাঁধ ও বাঁধের পাইলিং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অপসারণ না করায় এবং সড়কের গাইডওয়াল নির্মাণের সময় কাটা মাটি খালের তলদেশ থেকে অপসারণ না করা হলে মৌসুমের সেচ কাজে পানি পাবেন না তারা। ফলে বাম্পার ফলন তো দূরের কথা, পানির অভাবে শীতের কারণে ধানের চারা মারা যাওয়ার চরম আশঙ্কা করছেন। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজিহার, বাকাল ও গৈলা ইউনিয়নের কয়েক হাজার চাষী পরিবার।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সেচ মৌসুমে পানি সংকটের শঙ্কার সত্যতা জানিয়ে বলেন, বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে বিষয়টি দ্রæত সমাধান করার চেষ্টা করবেন।