ওরা দুই ভাই জমজ। ওদের বয়স যখন ৫ বছর। তখন তাদের বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মা আর বড় দুই ভাইয়ের অদম্য চেষ্টায় শিক্ষা জীবনের পথে ওরা বয়ে এনেছে সাফল্য। বিষ্ময়করভাবে তাদের শিক্ষাজীবনের সেসব সাফল্য ছিল জোড়ায় জোড়ায়। চেহারায় দু’জনে যেমন এক, তেমনি শৈশব থেকে সব শ্রেণীতে সাফল্যও একই রকম। চলতি বছর মেডিকেলে, রুয়েটে এমনকি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সাথে দু’ভাই ভর্তির সুযোগ পেয়ে তাক লাগিয়েছেন। তাদের এমন জোড়ায় জোড়ায় সাফল্যে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা। ওদের একজন খালেদ মাহমুদ এবং অপরজন খালেদ আযম। তারা দু’জনে নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাছিমপুর গ্রামের মৃত পিতাম উদ্দিনের ছেলে। সম্প্রতি ওদের দুই ভাইয়ের কৃতিত্বে উপজেলার লক্ষণহাটী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ সংবর্ধণা দিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল প্রধান অতিথি থেকে জমজ দুই ভাইকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
সম্প্রতি কথা হয় তাদের দু ভাইয়ের সাথে। তারা জানালেন তাদের সাফল্যের কাহিনী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে জিপিএ ৫ সহ দু’জনই প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। একই ভাবে এসএসসি ও এইচএসসিতেও জিপিএ ৫সহ দু’জনই শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তি লাভ করেন। এছাড়াও দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতে দুই ভাই এক সমান নম্বর পেয়ে শ্রেণীতে একই অবস্থান অর্জন করতেন। সম্প্রতি একই সাথে দুই ভাই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পান। বর্তমানে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সেসময় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় দুই ভাই সুযোগ পান। এছাড়াও ঢাকা, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় দুই ভাই এক সাথে ভর্তির সুযোগ পান। একদিকে সাফল্য যেমন জমজ আকারে তাদের ধরা দেয়, আবার ব্যর্থতাও তাদের জীবনে আসে জমজভাবে। এবছর শুধুমাত্র বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে দু’জনের কেউই সুযোগ পাননি। তারা আরও জানান, বাবার মৃত্যুর পর মা মেহেরনেকা তাদের কঠোর অধ্যাবসায় মনোনিবেশ করান। আর বড় ভাই দুই ভাই তাদের পড়ালেখার আর্থিক খরচ জোগান দেন। বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ব্র্যাকের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে সিরাজগঞ্জে এবং মেঝো ভাই মিজানুর রহমান স্থানীয় একডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ভাই মিজানুর রহমান জানান, দুই ভাইয়ের জমজ সাফল্যে নিজেরাও বিষ্মিত হই। স্থানীয়রা এ নিয়ে অবাক হতেন। তাদের দুই ভাইয়ের জন্য তিনি সকলের দোয়া প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে লক্ষণহাটী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ একেএম শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, ওই জমজ দুই ভাই তার প্রতিষ্ঠান থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। প্রত্যেক ক্লাশে তারা সমান নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান লাভ করতো। তাদের জোড়া ফলাফলে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও অবাক হতেন।