৫২ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও গ্রাম্য শালিসে এখন ভূমিহীন ৭৫ বছর বয়সী মহাশীন আলী

নিজ নামে ৫২ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও গ্রাম্য শালিসে এখন ভূমিহীন ৭৫ বছর বয়সী হাজী মহাশীন আলী । বৃদ্ধের ছেলেদের ইন্ধনে প্রভাব খাঁটিয়ে গ্রামের কিছু সমাজপতি দফায় দফায় শালিস ডেকে ৫২ বিঘা সম্পত্তিই ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছে ছেলেদের মধ্যে । এমন কি বৃদ্ধের পৈত্রিক বসতীও গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাবার মৃত্যুর আগে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেই ছেলেরা কিছু সমাজপতি দিয়ে এটি করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে শালিস-বৈঠককারীদের সাথে কথা বললে তারা বলছেন জমাজমি তো মাতব্বরা নেয়নি, বৃদ্ধের বয়স হয়েছে তাই সুষম বন্টন করা হয়েছে, বৃদ্ধের ভরন-পোষন ছেলেরা দিবে।
”শালিসের ভেতর আমি মাতব্বরদের বলেছিলাম আমার কিছু দেন আপাতত, তারা কিছুই দিলনা, আমি এখন নি:স্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছি, আমার বাড়ি-ঘরও ভেঙ্গে দিয়েছে, আমি একা কি করব”? হতাশা ভরা কন্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন মানষিক, শারিরীক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলেপোল গ্রামের অর্ধশত বিঘা জমির মালিক হাজী মো: মহাশীন আলী । তিনি সমাজপতি আর ছেলেদের ভয়ে থানা-কাচারী করতে পারেননি।
৮সন্তান ও ২স্ত্রী নিয়ে গিলেপোল গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী হাজী মহাশীনের সংসার । প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে ৩ছেলে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২ছেলে ৩মেয়ে । বৃদ্ধ মহাশীন দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বসবাস করেন । তবে গ্রামের কিছু সুবিধাবাদি চক্রর নজর পড়েছে বৃদ্ধের সম্পত্তির উপর। এসবের জের ধরে গত ২মাস ধরে চালানো হয়েছে ৩দফা গ্রাম্য শালিস। আর এই শালিসে রায় হয়েছে জমা-জমি বৃদ্ধ মহাশীনের নামে হলেও কোন সম্পত্তির ফসলাদি তিনি পাবেন না। তিন বেলা খাবার ও ওষুধপত্র দেবে এই শর্তে মাতুব্বররা তার ৫২ বিঘা জমি পাঁচ সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। এমন কি দুই স্ত্রী ও কন্যারাও সম্পত্তির অধিকারী হবেন না বলে রায় দিয়েছেন মাতব্বররা। গিলেপোল গ্রামে এই শালিস-বৈঠককারী মাতব্বর জয়নাল আবেদিন ও মালু মন্ডল জানান, ছেলেদের মধ্যে কলহ শুরু হয়েছিল তাই বিরোধ মেটাতে এমনটি করা হয়েছে। তারা বলেন, জমাজমি তো মাতব্বরা নেয়নি, বৃদ্ধের বয়স হয়েছে তাই সুষম বন্টন করা হয়েছে, বৃদ্ধের ভরন-পোষন ছেলেরা দিবে।

এদিকে গ্রাম ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে , রাতদিন কান্নাকাটি আর কষ্টের মধ্যে আছেন এক সময়কার সম্পদশালী হাজী মহাশীন। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে মোজাম্মেলের সাথে থেকে কোনরকম মাথা গুজে দিনতিপাত করছেন, সেই গ্রামের সমাজপতিরা চাপ প্রয়োগ করে এমন শালিস-বিচার করেছেন ।
মহাশীন আলীর প্রথম স্ত্রীর ছেলেদের সাথে কথা বলতে গিয়েও বাড়ীতে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে ২য় স্ত্রীর ছেলে মোজাম্মেল মন্ডল বলছেন, তাদের বাবার অমতে এমন শালিস করা হয়েছে, বোনদের বঞ্চিত করা হয়েছে । আর বৃদ্ধের প্রথম স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলছেন গ্রামবাসী সঠিক বিচার করছেন ।