বিশ্বনাথে কিশোরীকে ধর্ষণ জোরপূর্বক বাল্য বিয়ে, ছেলে আটক

সিলেটের বিশ্বনাথে ১৬ বছর বয়সি কলেজ পড়ুয়া কিশোরীকে লন্ডনি পিতা কর্তৃক জোরপূর্বক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া ও ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মাঝগাঁও (সিংগেরকাছ) গ্রামের বদরুল আলমের বসত ঘর থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার ও যুবক আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় পিতাকে প্রধান আসামি করে আটক যুবক ও আরও দুইজনের নাম উল্লেখ করে ৩/৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি রেখে থানায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ দমন আইনে ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ২৭ (তাং ১৯.১২.১৯ইং)মামলার অভিযুক্তরা হলেন-উপজেলার মাঝগাঁও (সিংগেরকাছ) গ্রামের মৃত আবদুল মুতলিবের ছেলে কিশোরীর পিতা আবদুল ওয়াজির বাবুল (৫০), একই গ্রামের মুক্তার আলীর ছেলে আটক যুবক বদরুল আলম (২৯), সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার কিজিরপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে রাজিব (৩০), সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত করিম উল্লার ছেলে দিলোয়ার হোসেন (৪৪)। আটক যুবক বদরুল আলমকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।থানায় দায়েরকৃত এজাহারে কিশোরী উল্লেখ করেন, বাদী সিলেট মদন মোহন কলেজের ব্যবসায়ী বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ১ম বর্ষের ছাত্রী। প্রধান অভিযুক্ত যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল ওয়াজির বাবুল তার (বাদীর) পিতা। বাদীর পিতা ৬/৭টি বিয়ে করেছেন। আবদুল ওয়াজির বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান বাদী। বিয়ের পর বাদীর মাতাকে তার পিতা কোনো দিনে বাড়িতে নিয়ে যাননি। বাদীর জন্ম তার নানার বাড়িতে হয়। বাদীর বয়স যখন ৫-৬ বছর, তখন তার মায়ের সঙ্গে পিতার বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে বাদী সিলেট মদনমোহন কলেজে একাদশ শ্রেনীতে লেখা পড়া করে আসছেন। বাদীর পিতা মাঝেমধ্যে তার (বাদীর) সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নেন। গত ৩১.১০.১৯ইং তারিখে বাদীর পিতা লন্ডন থেকে সিলেট নগরীর হাওয়া পাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। ঐদিন সকালে বাদীকে তার পিতা আবদুল ওয়াজির বাবুল জানান তিনি লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন এবং আজকেই তোমাকে (বাদীকে) নিয়ে তার বাসায় আসব। ঐদিন সন্ধ্যায় বাদীর পিতা ও অপর অভিযুক্ত রাজিব অজ্ঞাত আরও ৩জন একটি নোহা গাড়ি নিয়ে বাদীর নানার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার পাইগাঁও গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাদীর নানা-নানীকে বুঝে তাকে (বাদীকে) লন্ডন নিয়ে যাবে এবং কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে এ আশ্বাস দিয়ে বাদীকে নিয়ে আসেন পিতা। গত ৫ নভেম্বর সকালে বাদীকে তার পিতা জানান, তোমার লন্ডন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, কিছু কেনা কাটার প্রয়োজন, তুমি আমার সঙ্গে মার্কেটে যাবে। বাদী তার পিতার সরলমনে তিনি মার্কেটে যান এবং সেখানে কিছু কাপড় কেনা কাটা করেন। গত ১০নভেম্বর দুপুরে বাদীর পিতার আত্বীয়-স্বজন ও সহযোগি লোকজনসহ অভিযুক্ত বদরুল আলমকে নিয়ে বাদীর পিতার বাসায় আসেন। এসময় বাদীকে অভিযুক্ত বদরুল আলমের সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসার কথা বলেন (বাদীর) পিতা। এতে বাদী তার বিয়ের বয়স হয়নি বলে জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীর পিতা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। যাতে বাদি কার সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন। এক পর্যায়ে বাদীকে অবরুদ্ধ করে বাদীর পিতা অভিযুক্ত বদরুল আলমসহ অন্য অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে বাদীকে প্রলোভন দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করে বাদীকে বিবাহ করতে বাধ্য করা হয়। গত ১০ নভেম্বর কাজী ডেকে এনে জোরপূর্বক অভিযুক্ত বদরুল আলমের সঙ্গে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে বাদীকে বিয়ে দেয়া হয়। ওই রাতে বাদীকে অভিযুক্ত বদরুল আলম তার বাড়ি বিশ্বনাথের মাঝঁগাও (সিংগেরকাছ) গ্রামের বসত ঘরে রাখে। এসময় অভিযুক্ত রাজিব ও দিলোয়ার হোসেন বাদীকে বলেন তোমার বিয়ে হয়েছে তাই বদরুল আলমের সঙ্গে এ রুমে তোমাকে থাকতে হবে। এই বলে অভিযুক্ত বদরুল আলম ছাড়া অন্য অভিযুক্তরা রুম থেকে বের হয়ে যায়। ওই রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে অভিযুক্ত বদরুল আলম বাদীর সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করতে চাইলে বাদী তাতে অনিহা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বাদীকে অভিযুক্ত বদরুল আলম ধর্ষণ করে। গত ১১ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ওই রুমে বাদীকে আটকে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিযুক্ত বদরুল আলম দিনে ও রাতে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি বাদী তার নানা-নানীকে মোবাইল ফোনে জানান। পরে বাদীর নানা-নানী অভিযুক্ত বদরুল আলমের বাড়িতে আসেন। এসময় বাদীর সঙ্গে তার নানা-নানীর দেখা করলেও তাদের তাৎক্ষনিক বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। গত বুধবার পুণরায় বাদীর নানা-নানী অভিযুক্ত বদরুল আলমের বাড়িতে আসলে তাদের অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়। এক পর্যায়ে বিশ্বনাথ থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ অভিযুক্ত বদরুল আলমের বসত ঘর থেকে বাদীকে উদ্ধার ও বদরুল আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। অভিযুক্তরা বাদী অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া শর্তেও জেনে শুনে বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিবাহ দেয়াসহ আটক রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।ভিকটিম উদ্ধার ও যুবক আটকের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা ও থানার এসআই মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ভিকটিম বাদী হয়ে আটককৃত যুবকসহ আরও ৩ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ দমন আইনে ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। আটক যুবক বদরুল আলমকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে তিনি  জানান।