পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদ করায় নাটোরের গুরুদাসপুরে তিন বন্ধুকে দুই বছর ডিটেনশন ও ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। ওই সময় তাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ ছিল না। মুজিব হত্যার ৪৩ বছর কেটে গেলেও তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ।
ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ এ তিনবন্ধু প্রবীর কুমার বর্মন, নির্মল কর্মকার ও অশোক কুমার পালকে ১৯৭৫ সালে “রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই” শ্লোগানে পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করার অপরাধে আটক করে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর ১৯৭৭ সালে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।
তারা বলেন, সে সময় অন্যায়ভাবে আটক করে তাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলা হয়। জীবনের সোনালী সময়ে গড়তে দেয়া হয়নি তাদের উজ্জ¦ল ভবিষ্যত। জেল থেকে মুক্তির পরও তারা ভয়ে ভয়ে থাকতেন। কখন জানি তাদের গ্রেফতার করা হয়। গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে ওই তিন বন্ধুর বসবাস। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের জীবন চলছে সীমাহীন কষ্টের মধ্য দিয়ে।
মুজিবভক্ত প্রবীর বর্মন বলেন, কষ্ট সয়ে দুই মেয়ে কৃপা ও তৃষাকে এমএ পাশ করিয়েছি। তাদের চাকরি হয়নি। ছেলে প্রসেনজিৎ বিএ পড়ছে। স্ত্রী সন্ধ্যা বর্মন অসুস্থ। প্রবীর থাকেন ছোট ভাইয়ের ইলেকট্রিক দোকানে। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে সংসারের খরচ জোগাতে তিনি হিমসিম খাচ্ছেন।
আরেক বন্ধু নির্মল কর্মকার বলেন, মেয়ে তাপসিকে এমএ পাস করালেও অর্থাভাবে দুই ছেলে তনয় ও শুভকে আইএ পাশের পর আর পড়াতে পারিনি। তারা একটি রঙের দোকান চালায়। স্বাচ্ছন্দে চলার পথতো পচাত্তরেই রুদ্ধ হয়ে গেছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অভাব অনটন বাড়ছে। টানাপোড়েন জীবনে সন্তানদের জন্য কিছু করতে পারলাম না- এটাই আফসোস।
অপর বন্ধু অশোক কুমার পাল বলেন, আমার সংসারের হাল শক্ত করে ধরতে পারিনি। গান শিখিয়ে যা মাইনে পাই বউয়ের হাতে দেই। দুই মেয়ে মুনমুন ও অন্তরা। অন্তরা এমএ পাশ করলেও চাকরি জোটেনি কপালে। গান গাই, গান শিখাই আর ঘুরে বেড়াই। না পাওয়ার বেদনায় অন্তরে অসুখ থাকায় মনে শান্তি নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনবন্ধু বলেন, ১৫ আগস্ট এলে তারা উপোস থাকেন আর বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় ভগবানের দরবারে প্রার্থনা করেন। তাদের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বাস্তবায়ন হওয়া। মুজিব হত্যার ৪৩ বছর কেটে গেলেও কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারপরও তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি।