গোপলা নদীর উন্মুক্ত জলাধার বন্ধ করে ব্যারিকেট দিয়ে অবৈধ ভাবে চলছে দিন-রাত মৎস্য লুট। মৎস্য ভান্ডার বলে খ্যাত হাইল হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ অনেক মাছ। মাছ শিকারের জন্য অবৈধ ভাবে বাঁশের কাঠি (পাটি বান) দিয়ে বৌলারদারা থেকে বড়ছড়া, চেংড়া বিলসহ আশ-পাশের খাল-বিল, নদী-নালা গুলো এখন একেবারেই ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। প্লাবন ভ‚মি বাঁধ দিয়ে অবৈধ কারেন্টজাল ব্যবহার, ডিমওয়ালা মা-মাছ নিধন, চাষযোগ্য কৃষিজমি ও পাহাড়ি এলাকায় লেবু, আনারস বাগানে কীটনাশক ব্যবহার, সর্বোপরি হাওরের নাব্যতা হ্রাস ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই দখল হয়ে গেছে বিশাল এই হাওরের অনেক ভূমি। সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি ছাড়াও গোপলা নদীসহ এই হাওর অঞ্চল অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। হাওর জুড়ে দীর্ঘ দিন থেকে পানিতে তলিয়ে থাকা কৃষিজমিতে কচুরিপানার একক রাজত্ব। আর হাওরের বিল তীরবর্তী এলাকায় অধিকাংশ জমিতে শাপলা,শালুকসহ নানা জাতের জলজ ঘাস। কচুরিপানা আর ঘাসের এমন একক আধিপত্য। নদী-নালা, খাল, বিল রক্ষার জন্য স্থানীয়রা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোন কাজ হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান- মির্জাপুর ও লামা পাড়ার এলাকার নাসির উদ্দিন, মব্বত উল¬্যাহ. দুলা মিয়া, শফিক মিয়া, জুয়েল মিয়া ছাইফুল মিয়াগংরা দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে নদীর উন্মুক্ত জলাধার বন্ধ করে অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যাবহার করে বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেট দিয়ে প্রকাশ্য মৎস্য নিধন করে আসছেন। স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার তাদের অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে দিয়ে ছিল। কিন্তু, আবারও সেই-যেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তারা মুখে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেও বাস্তবে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। যেনো অনেকটা জেগে ঘুমিয়ে থাকা। অভয়াশ্রম সংলগ্ন হাইল হাওরের মৎস্য ও জলাভূমি সংকটাপন্ন হয়ে পড়ায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১নং মির্জাপুর ইউনিয়নের স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে ননী গোপাল রায় গোপলা নদী বেআইনীভাবে কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক সরকারী রাজস্ব ফাঁকি লক্ষ লক্ষ টাকা আতœসাতের প্রতিকার প্রার্থনা করে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব-৯, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশি¬স্ট দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও সুফল পাচ্ছেননা। অভিযোগ করায় উল্টো তাকে মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। জানা গেছে- প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের এই হাওর অঞ্চলে রয়েছে ৪ হাজার হেক্টর প¬াবন ভ‚মি, ৪হাজার ৫শত ১৭ হেক্টর হাওর, ১হাজার ৪শত হেক্টর বিল, প্রায় ৪০ হেক্টর খাল ও ৫০ হেক্টর নদী। স্থানীয়রা বলেন- মৎস্য সম্পদের এই বিশাল ভান্ডারে ৯৮ প্রজাতির মাছের আবস্থান ছিল। এই হাওরে ইলিশ মাছ পাওয়া যেত। এসব মাছ প্রকৃতিগত ও মানুষসৃষ্ট কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার সময় প¬াবন ভ‚মিতে কই, মাগুর ও শিং মাছ পাওয়া যেত। স্থানীয় অফিস সুত্রে প্রকাশ- প¬াবন ভ‚মি বাঁধ দিয়ে ফিসারি নির্মাণ, অবৈধ কারেন্টজাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মৎস্য শিকার এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণেই মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সম্পদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ২১ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ১১ প্রজাতির দেশীয় মাছের অস্তিত্ব আজ পুরোটাই হুমকির মুখে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মাছগুলো হলো- বাচা, ঘারুয়া, ছেপচালা, বাঘাইড়, ঢেলা, রিটা, বাঁশপাতা, রানী, নাফতানি, নাপতে, কই, বামোশ, বড় বাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা, একথুটি, চাকা, শ্বেত সিংগি, শ্বেত মাগুর মাছ। আর বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় রয়েছে পাবদা, আইড়, বেদা, মিনি, ফলি, গজার, গুলশা, দাড়কিনি, চিতল, টাটকিনি ও তারা বাইন। এসব মাছ এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না।