ঈশ্বরদীতে সূর্য্য (ছট) পূজা শুরু

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই দিন ব্যাপী সূর্য্য (ছট) পূজা উৎসব মূখর পরিবেশে শুরু হয়েছে। শনিবার বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা চত্বরের পুকুরে সূর্য্য দেবের উদ্দেশ্যে পূজাদানের জন্য শত শত নারী পুরুষ উপস্থিত হয়। বিশেষ করে অবাঙ্গালি হিন্দুদের নারীরা উপোস করে কোমড় পর্যন্ত পুকুরে নেমে এই পূজার সূচনা করেন। সূর্য্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এই পূজা চলে। এসময় ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান, প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু, জেলা পরিষদের সদস্য শফিউল আলম বিশ্বাস, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল চক্রবর্তিসহ স্থানীয় নের্তৃস্থনীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। রবিবার ভোরে সূর্যোদয়ের আগেই আবারও নারীরা পুকুরে নেমে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত সূর্য্যদেবের অর্চনা করবে। সূর্য্য পূজা উপলক্ষে ঈশ্বরদীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসব মূখর পরিবেশ বিরাজ করছে।ছট পূজায় কোনো মূর্তি উপাসনার স্থান নেই। এতে ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পূজা করা হয়। পূজার দুদিন আগে লাউ ভাত এবং একদিন আগে খির ভাত খাওয়ার সাথে ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। পূজায় সম্পূর্ণ সাত্বিক নৈবেদ্য ইত্যাদি কুলো, ডালা বা পাচিতে রেখে উৎসর্গ করা হয়। বিভিন্ন ফল মূল, মিঠাই ইত্যাদির সঙ্গে পরম্পরাগত বিহারী লোকখাদ্য “ঠেকুয়া” প্রস্তুত করে নৈবেদ্য রূপে প্রদান করা হয়। এ সময় নুন-মশলা বর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম। এই পূজায় অনেককে নদীর ঘাটে গিয়ে পূজা করার দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পূজা এক সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সম্প্রদায়ের মানুষ এই পূজার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে পূজায় সামিল হতে শুরু করেছেন।
হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে উদযাপিত একটি প্রাচীন হিন্দু পার্বণ। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাডখন্ড, পূর্ব উত্তর প্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে।
ছট পূজা সূর্য্য ও তার পতœী ঊষার (ছটী মাঈ) প্রতি সমর্পিত হয়, যেখানে তাকে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। ছটে কোনও মূর্তি পূজা করা হয় না।
ছট বা ছঠ, ষষ্ঠী নামের অপভ্রংশ। মূলত সূর্য ষষ্ঠী ব্রত হওয়ার দরুন একে ছট বলা হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি পালনের পর এই চার দিনের ব্রতের (কার্তিক) শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী) সবচেয়ে কঠিন ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত্রি হল কার্তিক শুক্লা ষষ্ঠী; বিক্রম সংবৎ-এর কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত উদযাপিত হওয়ার কারণে এর নাম ছট রাখা হয়েছে। এই পূজার কবে কোথায় উৎপত্তি হয়েছিল তার কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায় না। কিন্তু কিছু পৌরাণিক আখ্যানে ছট পূজার নীতি নিয়মের সাথে মিল থাকা উৎসব দেখা যায়।