পৃথিবীতে পিতামাতার সঙ্গে মানুষের যেমন নাড়ির সম্পর্ক, ঠিক তেমনি শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক আত্নার। জগদ্বিখ্যাত বীর আলেকজান্ডার তার শিক্ষক এরিস্টটলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলেছিলেন – To my father; I own my life;To Aristotle,the knowledge to live worthily. ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক দুনিয়ার সেরা সম্পর্কগুলোর একটি।নবজাতকদের পৃথিবীতে আলো দেখার পর মা বাবার হাত ধরে বড় হয়। পাঁচ বছর বয়স থেকে তাদের স্কুল জীবন শুরু হয়। শিশুরা বৈচিত্রময় পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকের কাছে। শিক্ষকই জ্ঞানশুন্য মানবশিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। তাই শিক্ষকের সাথে শিশুদের সম্পর্ক অত্যন্ত সম্মানসূচক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও আনন্দদায়ক হওয়া প্রয়োজন। যে সব বিষয়ে একজন শিক্ষক প্রিয় বস্তুতে পরিণত হতে পারে বা সে শিক্ষককে সম্মান ও আগ্রহভরে ভক্তি করে মনেপ্রাণে স্থান দিয়ে থাকে হলঃ
১. মা বাবার পরে শিক্ষকঃ
শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে বন্ধুর মত। শুধু তাই নয়, আমাদের মা বাবার অভাব অনেকটা পূরণ করে থাকেন শিক্ষক। শিক্ষকের অবস্থান আমাদের মা বাবার পরেই।
২. বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কঃ
শিক্ষকের সাথে যখন একজন শিক্ষার্থীর ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক সময় শিক্ষার্থীর বিশ্বস্ততার জায়গায় স্থান পায় শিক্ষক। শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর সম্পর্কটা হবে বন্ধুর মত।
৩. নামধরে ডাকাঃ
সকল শিক্ষার্থীর নাম ধরে ডাকতে পারা একটি চমৎকার কৌশল। শিক্ষার্থীদের নাম ধরে ডাকলে তারা সম্মানিত বোধ করে।
৪. শিক্ষার্থীদের পছন্দের দিকে নজর দেওয়াঃ
শিক্ষার্থীদেরআগ্রহ, পছন্দের বিষয় এবং তাদের আকাঙ্খার দিকে নজর রাখা। তাতে তারা মনে করবে স্যার/ ম্যাডাম আমার দিকে বিশেষ নজর দেন।
৫. বইয়ের বাইরে আলোচনাঃ
একজন শিক্ষককে শুধু বই পড়ালেই হবে না। বইয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এতে শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে গভীর ভাব প্রকাশ হয়।
৬.শিক্ষককে সম্মান প্রদান করা শেখানোঃ
শিক্ষককে মান্য ও সম্মান প্রদান করতে হবে। শিক্ষক বন্ধু হলেও মনে রাখতে হবে মা বাবার মত শিক্ষকের সম্মান যেন অক্ষুন্ন থাকে।
৭. মৌখিক প্রশংসা করাঃ
শ্রেণিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের মন্তব্য ও প্রশ্ন করাকে পুরস্কৃত করতে হবে।
৮. হাসিখুশি থাকাঃ
শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে খুব আনন্দিত ও উৎফুল্ল থাকতে হবে, শিক্ষার্থীরা যেন বুঝতে পারে শিক্ষাদানে শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে এসে তিনি খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল।
৯. সবার প্রতি সমান দৃষ্টি রাখাঃ
শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রাখতে হবে এতে শিক্ষার্থীদের সাথে উন্মুক্ততা, সততা এবং সমান দৃষ্টি রাখা প্রকাশ পায়।
১০. শিক্ষকের দার্শনিকের ভূমিকা রাখাঃ
শিক্ষক হল প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে দার্শনিকের মত। একজন দার্শনিকের যে সকল গুণ থাকা দরকার, তেমনি শিক্ষককেও এটা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীর মধ্যে গুণগুলো তৈরি করতে হবে।
১১. স্থান পরিবর্তনঃ
এক জায়গায় বসে না থেকে শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে ঘুরাঘুরি করতে হবে, এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে ভয় ও দুরত্বের বিষয়টি কেটে যাবে।
১১. আই কনট্যাক্টঃ
শিক্ষার্থীদের অসুবিধা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তাই সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি রাখতে হবে।
১২. পাঠ্যবই সম্পর্কিত দেয়াল চিত্রঃ
পাঠ্য বইয়ের নানা চিত্র শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিলে করলে এটিও ভাল সম্পর্ক স্থাপনে চমৎকার ভুমিকা রাখে।
১৩. ক্ষমাশীল দৃষ্টিভঙ্গিঃ
শিক্ষকের ক্ষমাশীল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। আর তাতেই সম্পর্ক হবে অভিভাবকতুল্য ও বন্ধুসুলভ। শিক্ষক হবেন ছাত্রের গর্ব আর ছাত্র হবে শিক্ষকের অহংকার।
১৩.মাসিক অভিভাবক সমাবেশঃ
শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে অভিভাবক সমাবেশ করা প্রয়োজন। এতে অভিভাবকও সচেতন হতে পারে শিক্ষার্থীর প্রতি।
১৪. জীবনধর্মী ও বাস্তবমূখী দক্ষতাঃ
শিক্ষার্থীদের জীবনধর্মী ও বাস্তবমূখী কিছু দক্ষতা শেখানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত। যেমন নাচ,গান,ছবি আঁকানো ইত্যাদি।
পরিশেষে এককথায় বলা যায়, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হতে হবে পাত্র ও পানির মত। একজন শিক্ষকই শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের পেছনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়, স্বপ্ন দেখায়। শিক্ষক শিক্ষার্থীর এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাথুনীর সম্পর্ক। শিক্ষার আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থী আর অভিভাবকের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরী বলে মনে করি।
সহকারি শিক্ষক ফ্লাইট লেঃ কাইমূল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।