আসন্ন ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে মিরপুরে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তবে সে সব ম্যাচে অংশ নেননি টাইগারদের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কোচের অনুমতিক্রমে তিনি ছুটিতে আছেন।
ভারত সফরের আগে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ক্যাম্প শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। এর মধ্যেই হঠাৎ ধর্মঘট ডেকে বসেন ক্রিকেটাররা। ভেস্তে যায় সব উদ্দীপনা।
ক্রিকেটারদের এই আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে ক্রিকেট বোর্ড। বোর্ড ও বিভিন্ন সূত্রের প্রাথমিক তদন্তে দায় পড়েছে সাকিব আল হাসানের ঘাড়েই। বোর্ড মনে করছে, এ ধর্মঘটের সব কলকাঠি নেড়েছেন সাকিব আল হাসান। অন্য ক্রিকেটারদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনে নিয়ে গেছেন তিনি। এর সপক্ষে বোর্ড যুক্তিও দেখিয়েছে। কারণ, ক্রিকেটাররা দুই-তিন সপ্তাহ ধরে আলোচনা করলেও তারা বসে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে সাকিবের ফেরার ওপর। সিপিএল থেকে ফেরার তারিখ সাকিব পিছিয়েছিলেন তিন দিন।
সে কারণে ক্রিকেটারদের কর্মসূচিও পিছিয়ে যায় তিন দিন। আবার গত সোমবার ক্রিকেটারদের সংবাদ সম্মেলনের আগমুহূর্তে একাডেমি মাঠে সাকিবের উপস্থিতির পরই যে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয় সে বিষয়েও নিশ্চিত হয়েছে বোর্ড। ভারত সফরকে পুঁজি করে ক্রিকেটারদের এভাবে বিভ্রান্ত করার আয়োজন বলে ধারণা ক্রিকেটপাড়ার বড় অংশের। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দাবি, ষড়যন্ত্রের শুরুটা হয় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ থেকে। নবীন দলটির বিরুদ্ধে হারার পেছনেও দায়ী সাকিব। আফগানদের স্পিন আক্রমণের কথা চিন্তা করে স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, চট্টগ্রামের উইকেট হবে স্পোর্টিং।
বাংলাদেশের স্কোয়াডে অন্তত দুজন পেসার থাকবেন। কিন্তু সাকিব আল হাসান জিদ করে দলে কোনো পেসার নেননি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের জেদের খেসারত হিসেবে হারতে হয়েছে দলকে। আফগানিস্তানের মতো নবীন টেস্ট দলের বিরুদ্ধে হারার পর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতাই যেন নষ্ট হয়ে যায়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পরাজয় যেন কিছুতেই মেনে নিতে পাচ্ছেন না পাপন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দল কেন, অনূর্ধ্ব-১৯ দল দিয়ে খেলালেও আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট জিততে পারতাম। দেশের মাটিতে যেখানে আমরা ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারালাম সেখানে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা হারব কেন! আমাদের যা যা পরিকল্পনা ছিল, সব উল্টে দিল কে? কেন? এর জবাব খুঁজতে গিয়ে আমি যেন বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। আমি জানতে চেয়েছি, যে উইকেট আমরা বানালাম, সেই উইকেটে খেলা হয়নি কেন? সাকিব বলেছে এটা বাজে উইকেট। কিন্তু অন্যরা বলেছে, সাকিব নিজেই নাকি বল করে উইকেট বাছাই করেছে। যাকেই জিজ্ঞাসা করি, বলে সাকিব এই উইকেটে খেলতে চেয়েছে। এখন ও যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে খেলা শেষে ও-ই কেন বলল, বাজে উইকেট! তখন আমি একটা কমিটি করে বললাম তদন্ত করতে। আরও আছে। মুশফিককে দিয়ে ওপেনিং করাল, আমরা তো কেউ কিছু জানি না! ও (সাকিব) নাকি এটাও বলেছে, পারলে মোসাদ্দেককে দিয়ে ওপেন করাত। সংবাদমাধ্যমে আবার বলছে, সব ওপর থেকে করা হয়। আমি সারা জীবন পেশাদার ছিলাম। আমি চেষ্টা করি একটা নিয়মের মধ্যে চলতে। কিন্তু তদন্ত করতে বলার পর এমন একটা হুলুস্থুল শুরু হলো! বোর্ডের সভাপতি হিসেবে আমার কি অধিকার নেই, আমি কি জানতে পারি না? ওরা বলছে, আমি কেন আমার লোকদের কথা শুনে একজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলেছি। আমার প্রশ্ন, সাকিব কেন তাহলে ওই বাজে পিচটা বেছে নিল টেস্টের জন্য?’
ধর্মঘটের বিষয়ে সাকিব বলেছেন, তিনি ক্রিকেটারদের দাবি-দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেন এই পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি? বোর্ড সভাপতির সঙ্গে তাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে পারতেন। কিংবা সাকিব তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে পারতেন! তাহলে কেন এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলেন? আন্দোলনের সময় পুরো ক্রিকেটবিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশের দিকে। এর মাঝেই সাকিব গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তি করেন, যা বোর্ডের সঙ্গে করা চুক্তির লঙ্ঘন। এ প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘খেলোয়াড়দের আমরা বলেছিলাম ওরা কোনো টেলকোর সঙ্গে চুক্তি করতে পারবে না। যেন সামনের বছর টেলকোগুলো টিম স্পন্সরের দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। তবু জেনেশুনে কি সাকিব এই বেআইনি কাজটা করতে পারে? আমি কি যা খুশি তা-ই করতে দেব ওদের! সময়টাও দেখুন। জানুয়ারিতে আমি নতুন স্পন্সরের দরপত্রে টেলিকম কোম্পানিকে আর পাব না। বা এলেও ওরা কম টাকা দিতে চাইবে। এভাবে যে আমাদের ফাঁদে ফেলল, এতে ক্ষতিটা কার? এতে শুধু একজন খেলোয়াড় লাভবান হলো, কিন্তু আমার ক্রিকেট দলের কী হবে?’
বোর্ড সভাপতি বলেন, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটা নিয়ম সে (সাকিব) ভাঙল, কেন? নিশ্চয়ই এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। এদিকে, সোমবার (২৮ অক্টোবর) মিরপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাকিবের বিষয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, সাকিবের ব্যাপারে আমরা আগামীকালই বলতে পারবো। অনিশ্চয়তা কিছু না, অফিসিয়ালি আসে নাই। বাইরে আপনাদের কাছ থেকে শুনছি যে, আপনারা অনেকে বলছেন- সাকিব যাবে কি যাবে না। এটা এমন কিছু না। সে দুই দিন ধরে অনুশীলন করেনি, কোচের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই কিন্তু অনুশীলন ম্যাচে খেলছে না। কালকে আমরা সব বিস্তারিত জানিয়ে দেবো