নজরুল রাজাকারের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি.
স্বঘোষিত এক রাজাকারের নাম নজরুল ইসলাম। রাজাকার নামেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। তিনি গুরুদাসপুর উপজেলার হাঁসমারী গ্রামের মরহুম আতাহার আলী মাস্টারের বড় ছেলে। পরে চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লায় তার স্থায়ী বসবাস। চাঁচকৈড় বাজারের বিশিষ্ট ইট ব্যবসায়ী হাজী দশরত আলীর ইটভাটার ম্যানেজার ছিলেন তিনি। সেই নজরুল ইসলামের মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি অস্বাভিক তা নিয়ে এখন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সর্বত্র।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যার দিকে ইটভাটা মালিকের ছেলে জাহিদুল ইসলামের সাথে ইট কেনাবেচার টাকার হিসেব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষন পরেই গ্যাসট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নজরুল। পরিবারের লোকজন তাকে জরুরীভাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আহম্মদপুর এলাকায় মৃত্যু হয়। তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে মর্মেই মাইকে প্রচার করা হয় এবং পরদিন সোমবার হাজী দশরতের ইটভাটা চত্বরে বেলা ১১টায় জানাযার নামাজ শেষে পুরানপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
কিন্তু তারপর এক কান-দু’কান করে এখন সবার কানেই নজরুলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পৌঁছে গেছে। শোনা যাচ্ছে, তিনি অনেকের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে অন্তত ত্রিশ লাখ টাকার ইট বিক্রি করেছেন, যা তার মহাজন জানতেন না। অনেকের প্রশ্ন, নজরুল ১২ বছরের চাকরি জীবনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ বা তছরুপ যদি করেই থাকে কর্তৃপক্ষ তার হিসাব নেয়নি কেন? কেন দশরত আলীর উপযুক্ত দুই ছেলে থাকা সত্বেও নজরুলকে ম্যানেজারের মত এতবড় দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল?
এসব ব্যাপারে অনেকে বিভিন্নভাবে মন্তব্য করেছেন। কারো মতে, দশরত হাজীর দুর্দিনের কান্ডারী নজরুল ইসলাম। তার দুই ছেলে যখন বিপদগামী তখন নজরুলকে ইটভাটার ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে নজরুল দিনরাত কঠোর পরিশ্রম ও বৃদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রায় মরতে বসা ইটভাটাকে পুনরায় উজ্জীবিত করেন। একটি থেকে এখন দুটি ভাটা হয়েছে। এতে ম্যানেজার নজরুলের অবদানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তবে নজরুল ইসলামের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ক্ষমা করাই হবে হাজী দশরত আলীর মহৎ গুণ। কারণ যেভাবেই হোক নজরুলের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেছেন, নজরুল ইসলাম যতটা বিতর্কিত তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। তার জানাযা নামাজে অসংখ্য লোকের উপস্থিতিও জনপ্রিয়তা প্রমান করে। তারপরেও পক্ষে বিপক্ষে কথা থেমে নেই। ইটভাটার হিসাবের ব্যাপারে কি হতে চলেছে তা নিয়ে এলাকার অনেকেই উৎস্যুক। কারো কারো মতে, নজরুল যদি টাকা আত্মসাৎ করেই থাকেন তাহলে ইটভাটার লেনদেনের মধ্যে আরও কেউকেউ জড়িত থাকতে পারেন বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে হাজী দশরত আলীর বড় ছেলে জাহিদুল ইসলাম বলেন, নজরুল প্রায় ৩০ লাখ টাকার অগ্রিম ইট বিক্রি করেছেন অনেক মানুষের কাছে। যা আমাদের জানার বাইরে। তারপরও নজরুলের পরিবারের দিকে তাকিয়ে আমাদের যাবতীয় পাওনা মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু যারা নজরুল ইসলামের কাছে পাওনাদার আছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।
এ ব্যাপারে নজরুলের বড় ছেলে সাহাবুদ্দিন বলেন, বাবার মৃত্যুকালে আমি বাইরে ছিলাম। তার মৃত্যুর কারণ আমার জানা নেই। তবে এলাকায় আমার বাবাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ হাতে পাইনি। নজরুল ইসলামের মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক তা নিয়ে বাইরে গুঞ্জন হচ্ছে কিনা তাও জানা নেই।