ডেভিলস ব্রিজ। শয়তানের হাতে বানানো ব্রিজ। ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে কোনও এক মধ্যরাতে হাজির হয়েছিল শয়তান। মন্ত্র দিয়ে নাকি বানিয়ে ফেলেছিল এই ব্রিজ।
পর্তুগালের মন্টেলেগ্রি এবং ভেইরা ডি মিনহো’র সীমানায় রয়েছে এই ব্রিজটি। এই ব্রিজকে নিয়ে এমনই শোনা যায়। এলাকার মানুষরা তাই সচরাচর রাত হলে ব্রিজের দিকে আসেন না।
ব্রিজটি মধ্যযুগে বানানো হয়েছে। খরস্রোতা রাবাগাও নদীর উপর পাথর দিয়ে তৈরি। প্রচলিত রয়েছে, এক রাতে নাকি এক ডাকাত এই পাহাড়ি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পালাচ্ছিল। রাবাগাও নদীর কাছে এসে সে আটকে যায়।
নদী পার করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ডাকাতের ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস ছিল না। সে কারণে, সে শয়তানের আরাধনা শুরু করে। সেই রাতেই নাকি প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়ে যায়, আর তার মধ্যেই ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে শয়তান এসে হাজির হয় তার সামনে।
ভক্তের অনুরোধ মেনে রাবাগাও নদীর উপর ব্রিজ বানিয়ে দেয় শয়তান। বিনিময়ে মৃত্যুর পর তার আত্মা শয়তানকে অর্পণ করার প্রতিশ্রুতি দেয় সে।
ব্রিজ পার করার আরও একটি শর্ত ছিল। ব্রিজ পার করার সময় পিছনে তাকালে চলবে না। তাহলে মুহূর্তে ব্রিজ উধাও হয়ে যাবে। পিছনে না তাকিয়ে ছুটে ব্রিজ পার করে চলে যায় সে। সে রাতের জন্য প্রাণেও বেঁচে যায়। কিন্তু এর কয়েক বছর পর তার খুব কঠিন অসুখ করে। মৃত্যু ভয় শুরু হয়। আর তখনই মনে পড়ে যায় শয়তানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা।
অতীতের সেই দিন নিয়ে আফসোস শুরু হয় তার। খুব শক্তিশালী এক যাজকের কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বলে। পরদিন রাতে রাবাগাও নদীর কাছে গিয়ে এক ভিখারি সেজে ওই ডাকাতের কথামতো ঠিক একই ভাবে শয়তানের আরাধনা শুরু করেন ওই যাজক।
শয়তান হাজির হয়। ভিখারিরূপী যাজকের অনুরোধ মেনে আত্মার অধিকার পাওয়ায় শর্তে নদীর উপর ওই একই জায়গায় ফের ব্রিজ বানাতে শুরু করে, আর ঠিক তখনই পবিত্র পানি শয়তানের উপর ছিটিয়ে মন্ত্রপাঠ শুরু করেন যাজক। উধাও হয়ে যায় শয়তান। কিন্তু সেই থেকে ব্রিজটি থেকে গিয়েছে।
এই লোককথা আশপাশের এলাকায় এতটাই প্রচলিত যে, রাত হলে আর ব্রিজের দিকে কেউ আসেন না। একমাত্র যে মহিলাদের সন্তান ধারণে কোনও সমস্যা রয়েছে, বা যারা অন্তঃসত্ত্বা, যাদের সন্তানের কোনও সমস্যার কথা চিকিৎসক জানিয়েছেন, তারাই মাঝরাতে এই ব্রিজে আসেন।
এটা নিয়েও প্রচলিত রয়েছে যে, তারা নাকি স্বামীর সঙ্গে একটি দড়ি আর একটি গ্লাস নিয়ে ব্রিজের মাঝামাঝি বসেন আর অপেক্ষা করেন।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, অপেক্ষা করার সময় ওই ব্রিজ দিয়ে প্রথম ব্যক্তি যিনি হেঁটে যাবেন, তিনিই ওই গ্লাসে দড়ি বেঁধে নদীর পানি তুলে মহিলার গর্ভে ছড়িয়ে দেবেন। প্রচলিত বিশ্বাস, সন্তান সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে এতেই।