আবদুল জব্বার, পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুদীর্ঘ ১৬ বছর পর বুধবার দুপুর১২টার দিকে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বুধবার পানি পরিমাপ করার পর এই তথ্য জানা গেছে।
সর্বশেষ বিগত ২০০৩ সালে এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছিলো বলে পাকশী বিভাগীয় রেলের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার অফিস সূত্রে জানা গেছে। এদিকে পদ্মা ও এর শাখা নদীতে পানি বাড়ায় পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার নিম্নাঞ্চলের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, উজান (ভারত)হতেপ্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসায় পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রমের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক এম কবীর মাহমুদ। তিনি বলেন, পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট রয়েছেন। জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজর রাখছে।
পাবনা পাউবোর হাইড্রোলজি বিভাগের উত্তরাঞ্চলীয় নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম জহিরুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পাকশীতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। দুপুর ১২টায় বিপদসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার পরিমাপ অনুযায়ী পানি বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
পাউবো, পাবনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ জানান, ঈশ্বরদীর পাকশীতে হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে বুধবার বেলা ১২টায় পদ্মার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। যা বিপদ সীমার ৭ সেন্টিমিটার উপরে। গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫/৬ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এদিকে পদ্মায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ হেক্টর ফসলি ও নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির নানা জাতের ফসল।
ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউপি চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। এবার উজানে প্রবল বর্ষণ ও ধেয়ে আসা পানির ফলে পদ্মা নদীর কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত রক্ষা বাঁধের মাত্র ১ ফুটেরও নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পাকশীর ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশের ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিন ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলসহ জমি। এখন পর্যন্ত কোনো বসতভিটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ঈশ্বরদীর সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লক্ষীকুন্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। পানি না কমা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ ওরফে কুল ময়েজ জানান, কয়েকদিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে এমনিতেই মাঠের শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ওপর পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শত শত কৃষক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন।
পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘যে গতিতে পদ্মায় পানি বাড়ছে তাতে পূর্ব হতেই ধারণা ছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।’