ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজালের কর্মকাণ্ড ঘিরে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও শামীম মোহাম্মদ আফজালের মধ্যকার বিরোধ চরমে পৌঁছেছে।
ইফা বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দেওয়া ডিজির কয়েকটি অফিস আদেশ ও শোকজ নোটিশ গত বুধবার পালটা নোটিশে বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে ইফাতে চলছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। ডিজির কয়েকজন অনুগত ছাড়া ইফার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই বর্তমানে ডিজিবিরোধী এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একমত বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজি পৃথক কয়েকটি অফিস আদেশে ইফার তিন জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ও চার কর্মচারীকে বদলি এবং ইফার সচিবসহ অপর তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শোকজ নোটিশ জারি করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে উত্তেজনা দেখা দেয়। গত সোমবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আরব আমিরাত সফর শেষে দেশে ফেরার পর বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পেরে ডিজির ঐ সব আদেশ বাতিল করার জন্য ইফার সচিবকে নির্দেশ দেন। তখন ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলাম পৃথক আদেশ জারি করে সেগুলো বাতিল করেন।
কাজী নূরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মহাপরিচালক বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বদলির আদেশ দিতে পারেন না। ইফার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের চেয়ারম্যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ডিজির অফিস আদেশগুলো বাতিলের আদেশ জারি করেছি। কেন, কী কারণে সেগুলো বাতিল করা হয়েছে, তা নোটিশে উল্লেখ আছে।’
এ ব্যাপারে ইফা বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সদস্য মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ডিজির যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, এটা ডিজির বিদায় নেওয়ার আগে তো আর কোনো সমাধান আমি দেখছি না। এখন প্রতিমন্ত্রী সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্বার্থেই একটি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত জুনে বায়তুল মোকাররম মসজিদের একটি পিলার চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদ ও মার্কেটের পরিচালককে বরখাস্ত করেন ডিজি। একে কেন্দ্র করে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ডিজির মধ্যকার বিরোধ সামনে আসে। দীর্ঘদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ইফার ডিজিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় শোকজ করেছিল। পরে ইফার ডিজি পদত্যাগ করতে গিয়েও পদত্যাগ করেননি। তিনি অফিস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সরানোর চেষ্টা করলে কর্মচারীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হন।
পরে ইফায় অব্যাহত বিক্ষোভ চলতে থাকলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ডিজিকে পদত্যাগ করে চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপর গত ২২ জুন ইফার বোর্ড সভায় প্রথমে ডিজিকে তার মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য ছুটিতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হলে ডিজি রাজি হননি। এ কারণে বোর্ড তার কিছু ক্ষমতা খর্ব করে। ডিজি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিসহ শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা নিতে পারবেন না মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ডিজি অনেকটাই চুপচাপ অফিস করছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ গত সপ্তাহে তিনি পরপর কয়েকটি অফিস আদেশ জারি করলে ইফায় আবার উত্তেজনা তৈরি হয়।
ইফা বোর্ড অব গভর্ন্যান্সের সদস্য ও প্রশাসনিক কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিজি যে বদলির আদেশ দিয়েছেন, তা বৈধ নয়। এটা বাতিলযোগ্য। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ ডিসেম্বর ইফার ডিজির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে। জুডিশিয়াল সার্ভিস বিভাগ থেকে প্রথমে ডেপুটেশনে এবং ২০০৯ সাল থেকে টানা ১০ বছর তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।