সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আর দুর্গা মায়ের আগমণবার্তা। বরিশাল বিভাগজুড়ে ভক্তদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে আকর্ষণীয় প্রতিমা নির্মাণের পাশপাশি সমান তালে চলছে সাজসজ্জার কাজ। বরাবরই বরিশাল বিভাগ ও জেলার মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পূজামন্ডপে ধর্মীয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারেও আগৈলঝাড়ার ১৫৪টি পূজামন্ডপে তাই জোরেসোরে চলছে পূজার যাবতীয় আয়োজন। আর এবছরই আগৈলঝাড়ায় অন্যতম প্রধান ব্যতিক্রমী আকর্ষণ থাকছে একশ’ হাতের নির্মিত দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার প্রতিমা। উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের জলিরপাড় গ্রামের বাসুদেব ওঝার বাড়িতে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মাণ করা হয়েছে একশ’ হাতের ব্যতিক্রমী দেবী দুর্গার প্রতিমা। ইতোমধ্যে প্রতিমা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
পঞ্জিকামতে ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্তলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেঁজে উঠবে। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে দেবীর নবপত্র কল্পারম্ভ ষষ্ঠী পূজা, ওইদিন মন্ডপে মন্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের শব্দ। ৫ অক্টোবর সপ্তমী পূজা, ৬ অক্টোবর মহাষ্টমী পুজা, ৭ অক্টোবর নবমী পূজা ও ৮ অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা ও দশহরার মধ্যদিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী পূজার আয়োজন সমাপ্ত হবে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে সর্বপ্রথম একশ’ হাতের দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের উদ্যোক্তা মৃত কালীচরণ ওঝার পুত্র বাসুদেব ওঝা একশ’ হাতের দেবী দুর্গার ইতিহাস সম্পর্কে পুরাণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন-“অদ্ভূত রামায়ণ”এ দেবী দুর্গার শত হাতের বর্ণনা পাওয়া গেছে। সেই বর্ণনা অনুযায়ী রাবন বধের পরে দেবী সীতাকে সকল শঙ্কামুক্ত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন শ্রী রামচন্দ্র। দেবী সীতা তখন রামচন্দ্রকে বলেন “প্রভু আপনি দশানন রাবণ বধ করলেও ‘শতস্কন্ধ” রাবণ বধ করতে পারেননি, রাবণ এখনও সাগরে নিমজ্জিত হয়ে জীবিত আছে”। তখন রামচন্দ্র দেবী সীতাকে নিয়ে “শতস্কন্ধ” রাবণের খোঁজে বের হন। সাগরের মলয় দ্বীপে ‘শতস্কন্ধ’ রাবণের দেখা পান শ্রী রামচন্দ্র ও দেবী সীতা। সেখানে শতস্কন্ধ রাবণের সাথে দেবী সীতার যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে দেবী সীতা শতহস্তে দেবী দুর্গার রূপ ধারণ করে ‘শতস্কন্ধ’ রাবণ বধ করেন। সেই রূপেই দেবী দূর্গা পূজিত হয়ে আসছেন।
একশ’ হাতের দুর্গাপূজার আয়োজন সম্পর্কে বাসুদেব ওঝা আরও বলেন, গত ৩০ বছর ধরে তাদের বাড়িতে সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হোমিওপ্যাথী চিকিৎসক হিসেবে সিলেটে অবস্থানকালীন সর্বপ্রথম একশ’ হাতের দুর্গাপূজা দেখে তিনি আকৃষ্ট হন। তার এক বোনের মেয়ের ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান না হওয়ায় শত হাতের দুর্গাপূজা মানত করেন। দু’বছর আগে তার বোনের মেয়ের একটি একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি একশ’ হাতের দেবী দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করে পূজার আয়োজন করেছেন।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূজা আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলেও একশ’ হাতের ব্যতিক্রমী দুর্গা প্রতিমা এই প্রথম নির্মাণ করা হয়েছে। শত হাতের দেবী দুর্গার নির্মাণ শিল্পী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মানিক বাউরী পালের পুত্র ছন্টু বাউরী জানান, বংশ পরস্পরায় তারা প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। ৬০ হাজার টাকায় তারা বাসুদেব ওঝার বাড়িতে ২০দিন কাজ করে একশ’ হাতের দুর্গা প্রতিমার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছেন। এবছর বরিশালে বাসুদের ওঝার বাড়ি ছাড়াও তাদের নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের পূর্ব শিমুলিয়া শম্ভুনাথ ভট্টাচার্যের বাড়িতে একশ’ হাতের দুর্গা প্রতিমা নির্মাণসহ মোট চারটি প্রতিমা নির্মাণ করেছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলায় ১৫৪টি পূজা মন্ডপে সহায়তার জন্য সরকারীভাবে ৭৭ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি পূজামন্ডপে পাঁচশ’ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, অসাম্প্রদায়িক উপজেলা হিসেবে পরিচিত আগৈলঝাড়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।