বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) কর্তৃক সাংবাদিকদের জন্য শিশু ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক রিপোটিং প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হবে বলে আমার অনুজ পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন মোবাইল ফোনে সংবাদটি জানালো। ১০-১১ সেপ্টেম্বর-২০১৯. দুই দিন ব্যাপি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে পাবনা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে।
যদিও ৪১ বছরের সাংবাদিকতা এবং লেখালেখি তার ও বেশি সময় ধরে। তবুও যেকোন প্রশিক্ষণকেই আমি শ্রদ্ধাভরে দেখি। কারণ নিজেকে যে যত বড় পন্ডিতই ভাবুননা কেন পারস্পারিক ভাবের আদান প্রদানে জ্ঞান চক্ষুর দারুন উন্মেষ ঘটে।
নির্ধারিত দিনে সকাল সকালই আমার টেবুনিয়ার বাসা থেকে বের হলাম। আজকাল সিএনজি রিকসা ও অটোবাইকের বদৌলতে সকল এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় দারুন উন্নতি হয়েছে নির্দ্ধিায় বলা যায়। যদিও সিএনজি অটোরিক্সা ও অটোবাইক জাতীয় সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ তবু তারা যে যাত্রীসাধারণের কল্যান বয়ে আনছে তা স্বীকার করতেই হবে।
টেবুনিয়া বাসষ্ট্যান্ড থেকে মাত্র ১৫ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে পাবনা শহরের নতুন ব্রিজের কাছে এবং ব্রিজের পশ্চিমে পৈলানপুর থেকে অটোবাইকে ৫ টাকা ভাড়ায় সার্কিট হাউস মোড়ে নামলাম। দেখতে দেখতে ওরা আমায় গন্তব্যে পৌঁছে দিলো।
প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হবে সকাল নটায়, আর আমি পৌঁছে গেলাম সাড়ে আটটায়। কোন অনুষ্ঠানে বিলম্বে যোগ দিলে নিজেকে অপরাধি মনে হয় কিন্তু অনেক আগে উপস্থিত হলে আবার নিজেকে বোকা বোকা মনে হয়। কারণ তখনো সম্মেলন কক্ষের দ্বার উন্মোচনই হয়নি। কি আর করা। সার্কিট হাউজের অভ্যন্তরের সুশোভিত ফুল, ফুলের গাছ, মিনি লেকের বক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ম্যুরাল দেখে দেখে এবং কিছু সেলফি তুলে সময় কাটাতে লাগলাম।
যাক যথাসময়ে পিআইবির প্রশিক্ষক ও সমন্বয়কারি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এবং প্রশিক্ষণার্থীরা একে একে এসে পড়ায় আমার অসহায়ত্ব দুর হলো। যথারীতি রেজিষ্ট্রেশন পর্ব সমাধা করে সুবিধামত জায়গায় বসে পড়লাম।
পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য এবং পাবনায় কর্মরত অন্যান্য সাংবাদিকদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এতে সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবি, মুহম্মদ মহিউদ্দিন, আমি (এবাদত আলী), এইচকেএম আবুবকর সিদ্দিক, আব্দুল মতীন খান, এম জি বিপ্লব চৌধুরী, শহিদুর রহমান শহীদ, এসএম মাহবুব আলম, ড. নরেশ মধু, মুরশাদ সুবহানি বাবু, ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, আব্দুল হামিদ খান, মোস্তাফা সতেজ, আবু হাসনা মোহাম্মদ আইয়ুব, মাহফুজ আলম, আব্দুর রশিদ, মোফাজ্জল হোসেন, রুমি খন্দকার, আখিঁনুর ইসলাম রেমন, উৎপল মির্জা, এসএমআলম, কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা, আহমেদ উল হক রানা, সরোয়ার মোর্শেদ উল্লাস,শুশান্ত কুমার সরকার, মোখলেসুর রহমান বিপ্লব, মোঃ হাসান আলী, দুলাল, ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল, সোহেল রানা বিপ্লব, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ সাংবাদিকগণের পদচারনায় পাবনা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষ তখন সরগরম।
রীতি অনুযায়ী উদ্বোধন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, অ্যাটকোর সভাপতি ও স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। বিশেষ অতিথি পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি ও সাবেক সভাপতি মুহম্মদ মহিউদ্দিন।
সভাপ্রধান পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিআইবির প্রশিক্ষক ও সমন্বয়কারি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন পিআইবি কর্তৃক মোবাইল জার্নালিজম চালু করার চিন্তা ভাবনা চলছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু পাবনার সাংবাদিকদের ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি প্রয়াত সাংবাদিক একেএম আজিজুল হক, মির্জা শামসুল ইসলাম, আনোয়ারুল হকের কথা সর¥ণ করেন। তিনি বরেন্য সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, সাংবাদিকতায় এবারে তিনি একুশে পদক লাভ করেছেন যাতে পাবনার সাংবাদিকদের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি েেপয়েছে। আমি পাবানর সাংবাদিকদেরকে নিয়ে গর্ব করি। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করতে পারেনা।
বিশেষ অতিথি সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি তাাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেই পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এদেশকে স্বাধীন করেছি। প্রশিক্ষণ না নিলে সেটা সম্ভব হতোনা।
বিশেষ অতিথি মুহম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, দিন দিন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আসছে। তাই সাংবাদিকদেরকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে।
সভা প্রধান হিসেবে পিআইবির মহা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ তাঁর ভাষণে প্রয়াত শ্যামসন এইচ চৌধুরীসহ পাবনার বরেন্য ব্যক্তিদেরকে স্মরণ করেন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন পাবনার সাংবাদিকরা সচেতন। কর্মদক্ষতার দিক থেকে বলতে গেলে ঢাকার সাংবাদিকদের পরেই তাদের স্থান। তিনিও একুশে পদকপ্রাপ্ত পাবনার প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট রণেশ মৈত্রের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন আমাদের সমাজ ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তা লক্ষনীয়। আজকে নিজেই নিজের ছবি তুরে পোষ্ট করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশেকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তার কল্যানেই নারী সমাজের অভুতপুর্ব পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই নারীদের উন্নতি সাধিত হচ্ছে। সাংবাদিকতার পেশায়ও তাই নারীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর রাজশাহী বিশ্যবিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেন। তিনি আমাদের অনেকেরই বিশেষ পরিচিত। বেশ কয়েকবার তিনি পিআইবির হয়ে পাবনাতে এসেছেন। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তাঁর বিষয় ছিলো শিশু ও নারী বিষয়ে রিপোর্টিং। শিশু ও নারী বিষয়ে রিপোর্টিং
এর ভাষা ব্যবহার। সব শেষে ফিচার লেখা (ব্যবহারিক) বিষয়ে আলোচনান্তে প্রথম দিনের কর্মচসুচির সমাপ্তি ঘটে।
পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর যথারীতি সকাল নয়টায় প্রশিক্ষণ কর্মশালার কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিন পিআইবর প্রশিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বাংলাদেশে শিশু ও নারীর পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে আলোচনা করেন।
চা বিরতির পরে শিশু অধিকার সনদ, শিশু নির্যাতন ( ঘরে-বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে), সিডও সনদ/ প্রতিবন্ধী শিশু ও অধিকার, নারী উন্নয়ন নীতিমালা বিষয়ে প্রশিক্ষকের ভুমিকা পালন করেন জেন্ডার স্পেশালিষ্ট আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার। এরপর প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন শেষে সনদ বিতরন ও সমাপন অনুষ্ঠান।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ। পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত প্রবীন সাংবাদিক ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্র। এসময় পিআইবির প্রশিক্ষক ও কোর্স সমন্বয়কারি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান ও জেন্ডার স্পেশালিষ্ট আব্দুল্লাহ শাহরিয়ারও উপস্থিত ছিলেন।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আখিঁনুর ইসলাম রেমনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে রূপ নেয়। সবশেষে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরন করা হয়।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।