হাসান মাহমুদ, আলীকদম (বান্দবরান) প্রতিনিধি
থানচি উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্পট “ডিম পাহাড়” দখলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধ প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন আলীকদম উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটায় আলীকদম প্রেসক্লাবের সামনে এমানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবরে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যম ২শত ১০ জন সচেতন নাগরিকের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার, ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, ৪নং কুরুক পাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ¤্রাে, আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা, সাধারণ সম্পাদক ধুংড়ি মার্মা, আলীকদম উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাতুল বড়–য়া, শ্রমিক গীগের সভাপতি আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী, ইয়োংলক ¤্রাে, আলীকদম প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ এছাড়াও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজ।
এসময় বক্তারা বলেন, ডিম পাহাড় আলীকদমের ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন ও ২৯০ নং মাংগু মৌজার অংশ। যা চিম্বুক পাহাড়ের সারিতে পড়ছে। এছাড়াও পাহাড়ে সীমানা নির্ধারণে সময় অন্যতম বিবেচ্য বিষয় হল পাহাড়ের এঢাল ওঢাল। সুতরাং ডিম পাহাড়টি যেহেতু পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে রয়েছে সেহেতু এটি আলীকদমেরই অংশ। অপরদিকে চিম্বুক পাহাড়সারিতে অবস্থিত ক্রিসতং, ক্রাউদং(ডিম পাহাড়) ও রংরং পাহাড় যেহেতু আলীকদমের অংশ, সেহেতু ডিম পাহাড় সমেত ২৬ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যে আলীকদমে সীমানায় পড়ে তাতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
পর্যটকদের আকর্শনের কেন্দ্র বিন্দু মেঘের রাজ্য, গহিন অরণ্য, প্রকৃতিক অনাবিল সৌন্দয আর বৈচিত্রময় এ ডিম পাহাড়ে থানচি উপজেলা প্রশাসনের লুলুপ দৃষ্টি পড়েছে। তারা ঐতিহাকি প্রেক্ষাপট, ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা না করে সম্পূর্ণ একতরপা ভাবে ডিম পাহাড়কে থানাচি উপজেলার অংশ দাবী করে সেখানে ইতিমধ্যে পর্যটন কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের পায়তারা করছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট পর্যালোচনায় দেখা যায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৬৬/৬৭সালে স্থাপিত অত্র এলাকার একমাত্র মুরুং পাড়া “কুলিং মুরুং কারবারী পাড়া’র অবস্থান ডিম পাহাড় এলাকায় ছিল। প্রায় ৩৫ বছর স্থায়ী বসবাসের পর কালের বিবর্তনে ২০০১-২০০২ইং সালে অন্যত্র চলে যায়। যা বর্তমান আলীকদম-থানচি সড়কের ২৩কিলোমিটার এলাকায় পড়ে। উক্ত পাড়ার প্রত্যেক নাগরিক আলীকদম উপজেলার বাসিন্দা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে থানচি উপজেলা প্রশাসন উপযাচক হয়ে আলীকদম উপজেলার সীমানায় প্রবেশ করে পর্যটনের নামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের পাঁয়তারা করছে। যা আলীকদমবাসী কোন অবস্থাতেই মেনে নেবেনা।
অপরদিকে ডিম পাহাড়টি আলীকদম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬কিলোমিটার এলাকায় ইতিপূর্বে স্থাপিত হয়েছে আলীকদম জোনের আওতাধীন সেনা ক্যাম্প।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি বিশেষ উন্নয়নের দৃষ্টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এর ঐকান্তি প্রচেষ্টা, বাংলাদেশ সেনাবাহির প্রায় এক দশকের নিরলস পরিশ্রমে তৈরী দেশের উচু আলীকদম-থানচি সড়কের ২৩কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত সমুদ্র পিষ্ঠ থেকে প্রায় ২৮০০ ফুট উচ্চতার ভ্রমন পিপাসুদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু ডিম পাহাড়। সুতরাং থানচি উপজেলাকে কোন অবস্থাতেই যেন ডিম পাহাড়ে স্থাপনা নির্মানের সুযোগ দেওয়া না হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন বক্তারা।