শাবলু শাহাবউদ্দিন
শিক্ষা জাতির জন্য যদি মেরুদণ্ড হয়, তাহলে শিক্ষক জাতির জন্য কী হিসেবে পরিগণিত হতে পারে ? নিশ্চয়ই হাত পা কিংবা মাথার চুল না ? এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত বলা যেতে পারে শিক্ষক জাতির জন্য ফুসফুসে । কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক নামে সেই ফুসফুসেতে ক্যান্সার ধরেছে । তাহলে একবার ভেবে দেখুন অদূর ভবিষ্যৎ জাতির জন্য কী অবস্থা হতে পারে । নিশ্চয় মৃত্যু ?
শিক্ষক এখন জাতির জন্য ক্যান্সার বলা যায়; এই জন্যই যে, শিক্ষক জাতি পুলিশ জাতিতে প্রায় রূপান্তরিত হচ্ছে । পুলিশের চাকরি জন্য যেমন আজকাল কোন ভাল ভদ্র পরিবারের সন্তানকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, ঠিক একদিন শিক্ষকতা পেশার ক্ষেত্রে এমণ যে হবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ কী দিতে পারবে ?
সাম্প্রতিক কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখা যাচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা ব্যতীত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছে । ভাল ছাত্র হয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় ডুকতে পারছে না । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ।রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী পাল্টাপাল্টি আন্দোলন, ছাত্রছাত্রীদের সেশন জট। রুমে ময়লা আছে বলে প্রতিবাদ করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বহিষ্কার । পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের রুমে অবৈধ খাট আবিষ্কার । ছাত্রছাত্রীরা রাজাকারে বাচ্চা বলে আলোচিত মাননীয় উপাচার্য মহাশয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে পাল্টা পাল্টি ছাত্র শিক্ষক আন্দোলন । প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে । সংক্ষিপ্ত আকারে এই গেল কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা নামে রমরমা শিক্ষা বাণিজ্য । কোন নিয়মনীতির ধারধারছে না। দেখার কেউ নেই ।
এবার আসি মাদ্রাসার দিকে, মেয়েদের যৌন নির্যাতন সহ হত্যা এমনকি আগুনে পোড়ানো নিত্য দিনের অবৈধ রূপে স্ববৈধ কাজ। হাইস্কুল কলেজ গুলোতে কলম ধরার মত অবস্থা নাই বলেই চলে । এখানে প্রকট আকারে মহামারী ফুসফুসে ক্যান্সার । রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য । সরকারি কলেজগুলোতে ক্লাস রুমে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি নেই । কিন্তু বিসিএস শিক্ষকেরা প্রাইভেট রুমে ছাত্রছাত্রীদের জায়গা দিতে পারছে না । জেলা স্কুলগুলোতে এক অন্য চিত্র । প্রাইভেট ছাড়া ছাত্র পাশ করতে পারে না । গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষক ধান ক্ষেতে,ছাত্রছাত্রীরা সারাদিন খেলার মাঠে । কোচিং বাণিজ্যের কথা না হয় নাই বললাম ।
সারা জীবন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে কোথাও জায়গা করতে না পেরে ফিরে আসছে শিক্ষিত বেকার শিক্ষকতা পেশায়। এই সকল শিক্ষিত মানুষগুলো কখনও শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানের পেশা হিসেবে না দেখে, দেখছে বাণিজ্য রূপে । নৈতিকতা হারাছে শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ই। এদের দাপটে সত্যিকারের ভাল শিক্ষকগণ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাজনের মহা বনে । ভবিষ্যতে জাতির কী হবে?
কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কলেজর অধ্যক্ষ । পাঁচ টালা বিল্ডিং তিন তালাতেই কাজ শেষ । দুই তালা অধ্যক্ষের পকেটে ।
এখন কথা হল ভাল শিক্ষক কী বাঁচবে না ? সকল শিক্ষক তো আর খারাপ না । কিছু কিছু আছে যাঁরা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলে । কিন্তু এই ন্যায়ই বা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে । চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায় ধরুন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদ স্যার । সে কী ন্যায় বিচার পেয়েছে ? কিংবা রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যারের কথায় একবার ভাবুন ।
একজন ছাত্র কেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে ? শিক্ষকরা কী এক্ষেত্রে কী কোন অংশেই দায়ী না ? কেন একজন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের সঠিক পথ দেখাতে পারছে না ? তাহলে কি জাতির ফুসফুসে ক্যান্সার ধরেছে ? এ ভবিষ্যৎ কী । তাহলে শিক্ষকতা মহান পেশা আর পেশা থাকবে না ? মরে যাবে ভালো শিক্ষক ?
মাননীয় রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বাঙালি বাঁচাতে হলে ভাল শিক্ষক বাঁচাতে হবে । শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিহত করুন, শিক্ষকতা পেশা মহান করতে হবে ।
শাবলু শাহাবউদ্দিন
কবি ও সাহিত্যিক
ইংরেজি বিভাগ,
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
রাজাপুর পাবনা ।