ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর থেকে ভাঙ্গুড়া হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য সংস্কার করা ২৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গতে শুরু করেছে। গতমাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ও ফাটল দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দরপত্র অনুযায়ী সংস্কারকাজ ও পর্যাপ্ত ফুটপাত না রাখায় সড়ক ভাঙ্গতে শুরু করেছে।
জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন পাবনার টেবুনিয়া থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি পর্যন্ত প্রধান এই সড়কটি ২০০৪ সালে প্রশস্তকরণ করা হয়। নির্মাণের তিন বছর পর থেকেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠতে শুরু করে। এমনকি অনেক জায়গায় সড়কের দুই পাশ ধসে পড়ে। এভাবে দিনে দিনে সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ বছর বছর লাখ লাখ টাকা দিয়ে নামমাত্র সংস্কার করে এই সড়কে। এরপরও সড়কে সহ¯্রাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়ে এক পর্যায়ে সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবশেষে সম্পূর্ণ সড়কটি মেরামতের জন্য তিনটি ভাগে দরপত্র আহবান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সড়কের দুইটি অংশ মেরামত করা হয়। কিন্তু মাঝখানের চাটমোহর থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সংস্কারবিহীন রয়ে যায়। এতে গত বছর থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকাগামী কোচ চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সবশেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়কের এই ২৫ কিলোমিটার মেরামতের জন্য দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পাবনার ধ্রুব কনস্ট্রাকশন ২৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় মেরামত কাজটি পায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে মেরামত কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম থেকেই মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ ছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ধ্রুব কনস্ট্রাকশনের মালিক ঠিকাদার স্বপন চৌধুরী অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এতে নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। যদিও সে ফাটলগুলো ঠিকাদার পুনরায় মেরামত করে দেয়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ অঞ্চলের প্রধান এই সড়কটির ভাঙ্গুড়া উপজেলার চরপাড়া ও ফরিদপুর উপজেলার পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকায় সড়কের এক পাশে দেড় ফুট চওড়া এবং এক ফুট গভীর হয়ে ভেঙ্গে দেবে গেছে। এছাড়া মেরামত চলাকালীন সময়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভেড়ামারা বাজারে ও ফরিদপুর উপজেলার খলিশাদহ বাজারে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে সড়কে ফাটল ধরে বসে যায়। পরে অবশ্য এই দুই স্থানে পুনরায় মেরামত করে ঠিকাদার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দরপত্র অনুযায়ী কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব মেইনটেইন না করায় এবং সড়কের দুপাশে প্রয়োজনীয় ফুটপাত না রাখায় বৃষ্টিতেই সড়ক ভেঙ্গে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের দুইপাশে মাটি দিয়ে সড়ক সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সড়কের আরো নতুন নতুন স্থানে ভেঙ্গে যাবে।
সড়কে চলাচলকারী স্কুল শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা সড়ক একমাস পরেই ভেঙ্গে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভাঙ্গনের স্থানগুলোতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এসব স্থানে আরও বড় ধরণের ভাঙ্গনের সৃষ্টি হবে।
সড়ক মেরামতে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে পাবনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন রায় বলেন, বৃষ্টিতে সড়কের কিছু কিছু স্থানে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তবে এতে সমস্যা নেই। সড়কের কোন স্থানে ভেঙ্গে গেলে ঠিকাদারকে দিয়ে সেসব স্থান সারিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুম হওয়ার কারণে এই মুহূর্তে সড়কের ভাঙ্গা স্থানগুলাতে পুনরায় সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।