ভাঙ্গুড়ায় রাস্তা সংস্কারে আংশিক কাজ করে বিল তুলেছেন শতভাগ

ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝি-কলকতি গ্রামে টিআর প্রকল্পের একটি কাঁচা রাস্তা সংস্কারে আংশিক কাজ করে বরাদ্দের সম্পূর্ণ অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খান ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আমেনা খাতুন উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগসাজসে এই অর্থ উত্তোলন করে নেন। এলাকাবাসী এই রাস্তা সংস্কার কাজ শেষ করার জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বারবার তাগিদ দিলেও তারা কর্ণপাত করছেন না। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে টিআর প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ঝি-কলকতি গ্রামের আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে আছাব প্রফেসরের বাড়ি পর্যন্ত ৪০০ মিটার কাঁচা সড়ক সংস্কারের অনুমোদন দেয় উপজেলা প্রশাসন। তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এই প্রকল্পের দেখভাল করেন। প্রকল্পের পিআইসির দায়িত্ব দেয়া হয় ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আমেনা খাতুনকে। তবে কাজটি মূলত ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই দেখাশুনা করেন। গত বছরের মে মাসে কাজ শুরু করা হয়। সে সময় মাটির সংকটের কারণে ইউপি চেয়ারম্যান মাত্র ১০০ মিটার সড়ক সংস্কার করে কাজ বন্ধ করে দেন। অভিযোগ আছে, সে সময় সড়ক সংস্কারের কথা বলে জোরপুর্বক সড়ক সংলগ্ন বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা হাতিয়ে নেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর কাজ বন্ধ রাখলে স্থানীয় বাসিন্দারা চেয়ারম্যানকে কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। তখন চেয়ারম্যান মাটির প্রাপ্যতা সাপেক্ষে পরবর্তীতে সংস্কার কাজ করার আশ্বাস দেন স্থানীয়দের। তবে কাজ শেষ না করেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের ২ লাখ টাকা বিল তুলে নেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার। কিন্তু এরপরে ১৪ মাস পার হয়ে গেলেও আর মাটি ফেলেনি ওই চেয়ারম্যান ও মেম্বার।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝি-কলকতি গ্রামের প্রধান পাকা সড়কের পাশের আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার কাঁচা সড়ক মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩০০ মিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই ওই কাঁচা সড়কে কাঁদা হয়ে লোকজন চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এছাড়া মাটি না ফেলায় সংস্কারবিহীন ওই ৩০০ মিটার সড়ক গত ৩ মাস ধরে বন্যার পানির নিচে নিমজ্জিত ছিল।

এসময় এলাকাবাসী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আংশিক কাজ করেই পুরো টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তাছাড়া যেটুকু কাজ করেছেন তার অধিকাংশ টাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের। গত এক বছর ধরে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অসংখ্যবার রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না।

ঝি-কলকতি গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা আর সড়ক সংস্কারের কথা বলতে চাই না। কেননা সংস্কার কাজ শুরু হলেই চেয়ারম্যানের লোকজন আবার আমাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলবে। গত বছর সংস্কারের সময় চেয়ারম্যানের লোকজন আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা না দিতে চাইলে আমার বাড়ি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তারা। এতে বাধ্য হয়েই আমি তাদেরকে টাকা দেই।’

একই গ্রামের বাসিন্দা ও ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কার না করেই প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উত্তোলন করে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মহিলা মেম্বার। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ না করে উল্টো চেয়ারম্যানই গ্রামবাসীকে ক্ষমতার ভয় দেখান।

কাজ না করে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার ও প্রকল্পের পিআইসি আমেনা খাতুন বলেন, ‘আমি শুধু নামমাত্র পিআইসি ছিলাম। সব কাজই করেছে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই। আমার কাছ থেকে শুধু স্বাক্ষর করে নিয়েছে চেয়ারম্যান। আমরা মেম্বাররা ইউনিয়ন পরিষদের পুতুলের মতো। আমাদের নিজস্ব কোনো মতামত সেখানে নাই।’

অভিযোগের বিষয়ে ভাঙ্গুড়া ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খান বলেন, ‘গত বছরের একটি টিআর প্রকল্পের রাস্তা সংস্কারের অসম্পূর্ণ কাজের বিষয়টা আমার মনে আছে। আগামীতে যেকোনো সময় ২০ জন শ্রমিক নিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলে দেবো। এছাড়া রাস্তা সংস্কারে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলার বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, টিআর প্রকল্পের একটি রাস্তা সংস্কার কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। দেখি অন্য কোন প্রকল্প দিয়ে কাজটি করে দেয়া যায় কিনা!

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি চার মাস হল এই উপজেলায় যোগদান করেছি। কিন্তু এ ঘটনা গত বছর ঘটেছে। তবে খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।