গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর সঙ্গে এক ধর্ষকের বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সদর থানার ওসিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় মামলা গ্রহণ ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয়েছে গণধর্ষণে অভিযুক্ত রাসেল নামের একজনকে। রাসেলের সঙ্গেই ওই গৃহবধূর বিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার বিকেলে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সদর থানার দাপুনিয়ায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নিয়ে এক ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের ঘটনাটি দৈনিক গণমাধ্যমসহ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশ হলে পুলিশ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। এর প্রধান করা হয়েছে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে। সোমবার বিকেলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণ মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সদর থানার ওসি ওববাইদুল হক থানা চত্বরে কেন এমন কাজ করলেন, তার ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরও অধিকতর তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিয়ের কাজি আজম উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাড়ি দাশুড়িয়ায়। সেখান থেকে সদর থানায় ডেকে নিয়ে বিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। প্রথমে বিয়ে দিতে অস্বীকার করি, কেননা এ বিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরে পুলিশের চাপে তালাক সাপেক্ষে বিয়ে পড়াতে আমাকে বাধ্য করা হয়। আমার কিছুই করার ছিল না।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে পুলিশের লোকজন ওই এলাকায় গিয়ে মেয়ে ও ছেলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। তারা থানায় বিয়ে হয়নি এমন বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাদের চাপ দেয়। ওই এলাকার ঘন্টু মাতবর নামে এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে এই ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এই ঘন্টু স্থানীয় সন্ত্রাসী বলেও জানায় তারা।
২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল মিয়া, ভাটপাড়া গ্রামের হোসেন ড্রাইভার, টেবুনিয়া রানী গ্রামের সিরাজ মাস্টারের ছেলে ঘন্টু, ফলিয়া গ্রামের কামালের ছেলে সঞ্জু এবং সাতমাইল এলাকার ফজলুর ছেলে ওসমান ওই গৃহবধূকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং তিন দিন বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা গত বৃহস্পতিবার তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে গৃহবধূ সদর থানায় লিখিত এজাহার দিলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। তবে ঘটনাটি মামলা হিসেবে না নিয়ে পর দিন রাতেই আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে স্থানীয় একটি চক্রের মধ্যস্থতায় গৃহবধূর সঙ্গে রাসেলের বিয়ে দেন ওসি। তবে বিয়ের ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ওসি। তিনি এর আগে দাবি করেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি উদ্ঘাটন করে সাংবাদিকরা পেশাগত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ওসি কী কারণে এ ধরনের ঘটনায় মামলা নিলেন না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে কারও কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।