পাবিপ্রবি’র খাস কামরার ঘটনায় যৌন হয়রানীর পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাস কামরার ঘটনায় যৌন হয়রানীর অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে ও বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যম্পাসে পৃথক ভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছে। আজ রবিবার বেলা ১২ টার দিকে ক্যম্পাসে তারা এই কর্মসূচী পালন করে। খাস কামরার হোতা শিক্ষকের পক্ষে ভিসির অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্যম্পাসে চলছে চরম আলোচনা সমালোচনা।
যৌন হয়রানীর অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে কিছু শিক্ষক কর্মকর্তারা বেলা ১২ টার দিকে ক্যম্পাসে খাস কামরার ঘটনা নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের প্রতিবাদে মানববন্ধন শুরু করে। এর আগেই শিক্ষার্থীরা ওই দুই শিক্ষকের বিচার দাবীতে তদন্ত কমিটি গঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে ছাত্র ধর্মঘট শুরু করে। সকালেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরিবহন বন্ধ থাকে। কার্যত অচল হয়ে পরে শিক্ষা কার্যক্রম। এদিকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভিসির প্রটোকল অফিসারকে ব্যাপক তৎপর হতে দেখা যায়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, খাস কামরার হোতা ও যৌন নীপিড়কের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি মূল ঘটনাকে আড়াল করার জন্যে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন চালায় ওই খাস কামরায়। বিষিয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও সামাজিক সম্মান ও শিক্ষা জীবনের কথা ভেবে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীরা মুখ খুলেছে। শিক্ষার্থীদের দাবী অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন ও সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ড থেকে দ্রুত অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
জামায়াত পন্থি শিক্ষক ড. কামরুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো করে দেওয়ার প্রলোভনে তাদের তাথে অনৈতিক কাজ কর্ম করে থাকেন। অনেক নারী শিক্ষার্থী ব্যাকলক (পূর্বের সেমিষ্টারে ফেল) থেকে পরিত্রান পাওয়ানোর জন্যেও যৌন হয়রানী করেন বলে অভিযোগ সাধারন শিক্ষার্থীদের।
জোড়পূর্বক ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে আসতে বাধ্য করা ও মানববন্ধন শেষে ভিসি স্যারের শিক্ষকদের মিস্টি খাওয়ানোর জন্যে সাধারন শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যৌন হয়রানীর অভিযুক্ত ওই শিক্ষক জিয়া পরিষদের একজন নেতা। সে নারী লোভীও বটে। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের পরেও কি করে শিক্ষকতা করেন, আমাদের নিজেদেরই লজ্জার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমরা আশা করি এই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সমাধান করা। বিষয়টি নিয়ে ক্যম্পাসে ও বাহিরে আমরা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি মধ্যে অবস্থান করছি।

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ চৌধূরী আসিফ বলেন, আমরা সব সময় সাধারন শিক্ষার্থীদের নায্য দাবীর সাথে একমত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভালো ভলাফলের নিশ্চয়তা দিয়ে যৌন হয়রানীর চেষ্টা করা মোটেও সমর্থন যোগ্য নয়। আমরাও খাস কামরার হোতা যৌন নিপীড়ক জামায়াতপন্থি ওই শিক্ষকের বিচার দাবী করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ওই শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও সাধারন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যৌন হয়রানীর অভিযোগে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের পক্ষে বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভক্ত হয়ে পরেছে, বিষয়টি সত্যিই কষ্টের। আমি ভিসি স্যারের সাথে বসে বিষয়টি সমাধানের কথা বলবো। আমি নিজেও খাস কামরার বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। কেউ যদি অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয়, সেটি তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়। তবে আমি সকল ধরনের যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে বার বার কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে গোপন খাস কামরার সন্ধান পেয়ে বিক্ষোভ করে। পরে তাদের বিক্ষোভের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই কামরা থেকে খাটসহ আসবাবপত্র বের করে দিতে বাধ্য হয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন চালায় ওই কক্ষে। বিষিয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও সামাজিক সম্মান ও শিক্ষা জীবনের কথা ভেবে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পায়নি। সম্প্রতি ওই কক্ষে খাট পেতে খাস কামরা তৈরির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তারা।