মোঃ হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
চলতি বছরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৫০ টাকার সম্পদ। এর মধ্যে কৃষি দপ্তরে ৪ কোটি ৮৩ লাখ, এলজিইডি দপ্তরে ১ কোটি ৮০ লাখ, মৎস্য দপ্তরে ৪৩ লাখ, মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরে ৫০ লাখ, প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে ১৮ লাখ টাকা, প্রাণি সম্পদ দপ্তরে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরে। এখনও শুরু হয়নি সংস্কার, মেরামত, পুনবাসন ও নির্মাণ কাজ। যার কারণে বানভাসি এলাকার সাধারণ মানুষজন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরায় এখনও চরাঞ্চলের মানুষজন নৌকা যোগে এমনকি কোমড় ও হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে চলাচল করছে। তিস্তার ডান তীর কামারজানি হতে বামতীর তারাপুরের ঘগোয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির শতাধিক স্থানে বন্যার কারণে ধসে এবং ভেঙে যাওয়ায় ওই রুটে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা অতিকষ্টে প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা করছে। বানভাসি অনেক পরিবার এখনও সংস্কারের কারণে বাড়িতে উঠতে পারেনি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারের অভাবে ঠিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষী ও খামারিরা পুনবাসনের অভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারছে না। চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভেসে নিয়ে গেছে স্মরণকালের বন্যা। কৃষিতে অভাবনিও ক্ষতি সাধন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ কৃষক এখনও চারা সংকটে আমন চাষাবাদ করতে পারছে না। কাপাসিয়া ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে চরের কৃষক আগামী দুই বছরের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে না। কারণ চরের অনেক কৃষকদের বসতবাড়ি এবং আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বসতবাড়ি মেরামতসহ আবাদি জমি চাষযোগ্য করে তুলতে মূলধন ও সময় লাগবে। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, বন্যায় যে সব রাস্তাঘাট ক্ষতি হয়েছে সে সব ক্ষতি বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া দুয়েক বছরেও মেরামত, সংস্কার ও নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকারের নেক নজর ছাড়া চলতি বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকার জানান, চলতি বছরের বন্যায় চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ব্রিজসহ যেসব ক্ষতি সাধন হয়েছে তা গত ২০ বছরের বন্যায় ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ক্ষতির পরিমাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলী জানান, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। সেটি যথাসাধ্য চেষ্টা করে রক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপন করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে আসা দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. আফজাল হোসেন জানান, ১৯৮৮ সালের পর এরুপ বন্যা আর কখন হয়নি। যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হবে তা সরকারের জানা ছিল না। সে জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করা হচ্ছে। আশা করছি সরকার অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।