বর্তমান সময়ে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা বেড়েই চলেছে।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও জীবিকা নির্বাহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বাড়ছে মনসিক ক্লান্তি, শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন আসছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্ধাত্ব।এ ক্ষেত্রে একটু স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে বন্ধাত্ব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিছু দিন ফার্টিলিটি ডায়েট মেনে খাবার খেতে হবে৷ দৈনন্দিন যে খাবার খান, তাতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই হবে৷ ভাত, ডাল, রুটি, পাস্তা তো এমনিই খাচ্ছিলেন, সেগুলোকে হোল গ্রেনে বদলে ফেলতে হবে৷ অর্থাৎ লাল বা বাদামি চালের ভাত, খোসাওলা ডাল, আটার রুটি, হোল গ্রেন পাস্তা–নুডুলস ইত্যাদি খেতে হবে৷ অপকারি ফ্যাট ছেঁটে উপকারীদের দিকে মন দিতে হবে৷ মাছ–মাংস–ডিমের পাশাপাশি ডাল, ছোলা, দুধ জাতীয় নিরামিষ প্রোটিন খেতে হবে৷ মাছ, মাংসও পাতে রাখতে হবে৷ মাঝে মধ্যে এক–আধ স্কুপ আইসক্রিমও খাওয়া যাবে৷
নিশ্চই ভাবছেন, এত আরামের ডায়েটে কাজ হবে কি না! তা হলে শুনুন, ‘নার্সেস হেল্থ স্টাডি’ নামের স্টাডিতে ৮ বছর ধরে ৮ হাজার বন্ধ্যা মহিলার উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে তবে বিজ্ঞানীরা এই ডায়েট বানিয়েছেন৷ এবং তাতে কাজ হয়েছে আশাতীত ভাবে৷
ফার্টিলিটি ডায়েট খেলে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মানের উন্নতি হয়৷ আশঙ্কা কমে হাই কোলেস্টেরল–প্রেশার, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক জাতীয় অসুখবিসুখের৷ ওজন বশে থাকে৷ তবে ডাক্তার দেখানো যেন বন্ধ করে দেবেন না৷ তাঁর কথা মতো চলুন, পরীক্ষানিরীক্ষা করান, ওষুধপত্র খান৷ সঙ্গে খান এই ডায়েটও৷ চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভাল হবে৷
ট্রান্স ফ্যাট বাদ দিন, ডিম্বাণুর ক্ষতি করা থেকে শুরু করে হাইকোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ওজন বাড়া ইত্যাদি সব কিছুর মূলে আছে তার হাত৷ অতএব যে কোনও প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেক্ড খাবার, বনস্পতি, মার্জারিন, ভাজাভুজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মুফা ও পুফাসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডায়াবিটিস ও ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকায় এরা৷ শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহের আশঙ্কা কমায়৷ এতে ডিম্বাণুর উপকার হয়৷ অতএব বিভিন্ন সব্জিজাত তেল— যেমন সর্ষে, সূর্যমুখী, সয়াবিন, অলিভ ইত্যাদি, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজ, অ্যাভোক্যাডো, ঠান্ডা জলের মাছ বিশেষ করে স্যামন, সারডিন, ইলিশ মাপ মতো খেতে হবে৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার যেমন ঘি–মাখন, ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাংস ইত্যাদি কম খেতে হবে৷
পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে হবে৷ মাছ–মাংস–ডিমের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে মটরশুঁটি, বিনস, সয়াবিন, টোফু, পনির, বাদাম, বীজ ছোলা ইত্যাদি৷
উপকারী কার্বোহাইড্রেট খান, চট করে হজম হয়ে রক্তে মিশে যায় এমন কার্বোহাইড্রেটের (সরল) বদলে খান ধীর গতিতে হজম হয় এমন কার্বোহাইড্রেট (জটিল) এতে রক্তের সুগার লেভেল ঠিক থাকে৷ ঠিক থাকে ইনসুলিনের কার্যকারিতা৷ আর তাতে ভাল থাকে ডিম্বাণুর মান৷ কাজেই হোল গ্রেন, শাকসব্জি–ফল, বিনস ইত্যাদি খান৷ বাদ দিন সাদা চালের ভাত, ময়দা, চিনি, মিষ্টি, ফলের রস ইত্যাদি৷
দুধ খান মাখন না তুলে , অর্থাৎ স্কিম্ড দুধের বদলে খান হোল মিল্ক, ফুল ফ্যাট ইয়োগার্ট, এমনকি মাঝেমধ্যে আইসক্রিমও৷
খান মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট , বিশেষ করে ফোলিক অ্যাসিড, দিনে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে৷ ডিম্বাণুর মান উন্নত করে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে এর ভূমিকা আছে৷
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, যেমন হোল গ্রেন সিরিয়াল, পালং, বিনস, কুমড়ো, টমেটো, বিট ইত্যাদি খেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কম থাকে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
মিষ্টি স্বাদের ঠান্ডা পানীয় নয়, ঠান্ডা জল খান৷ চা–কফি এমনকি মদও খেতে পারেন মাত্রা রেখে৷ কিন্তু নরম পানীয় মোটে নয়৷ ডিম্বাণুর সমস্যা হতে পারে৷
এ ছাড়া ওজন খুব বেশি বা খুব কম থাকলে পিরিয়ডের গোলমাল হতে পারে৷ তার হাত হবে শুরু হতে পারে ডিম্বাণুর সমস্যা৷ কাজেই ওজন যথাসম্ভব ঠিক রাখার চেষ্টা করুন৷ বিএমআই (ওজনের সূচক) ২০–২৪–এর মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভাল৷ সঠিক খাবার খেয়ে ও হালকা ব্যায়াম করে ধীরে ধীরে ওজন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন৷ ব্যায়াম করতে হবে৷ তবে মাত্রা রেখে৷ দিনে ৪০–৪৫ মিনিট কি বড়জোর ঘণ্টা খানেক৷
বন্ধ্যাত্ব কে নীরবে মেনে নেওয়ার কোন অর্থ নেই| সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপন আপনাকে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে।