মো. আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর প্রতিনিধি.
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের ফসলি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দুর করতে তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী পুনঃখনন করে পানি নিষ্কাশনের জোড়ালো দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সেইসাথে জরুরীভাবে সিএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে নদীর সীমানা নির্ধারন ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করারও দাবি জানান তারা।
ভুমি অফিসের তথ্যমতে, আরএস খতিয়ান অনুযায়ী গুরুদাসপুরে নদ-নদীর সংখ্যা মোট ৮টি। এরমধ্যে তুলসীগঙ্গা নদীর দৈর্ঘ্য ৫ কি.মি ও মির্জামামুদ নদীর দৈর্ঘ্য ৪ কি.মি। কিন্তু সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদী থাকলেও অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় আরএস রেকর্ডে প্রবাহমান ওইসব নদীর অস্তিত্ত্বই হারিয়ে গেছে।
নদী দুটি দখল-দূষণমুক্ত করতে স্থানীয় নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটি, চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি, সচেতন নাগরিক আন্দোলন কমিটি, কৃষক আন্দোলন কমিটি বিভিন্ন সময় নানাভাবে প্রতিবাদ সমাবেশে দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরে আসেনি। কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে নদী খেকো প্রভাবশালীরা অপ্রতিরোধ্যই থেকে গেছে।
উপজেলার নন্দকুজা, আত্রাই, গুমানী ও বেশানী নদী প্রভাবশালীদের দখল-দূষনের ধাক্কা সহ্য করেও অর্ধমৃত হয়ে কোনরকম চলমান আছে। কিন্ত চাপিলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এককালের প্রমত্তা তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। নদী দুটি দিয়ে উপজেলার চন্দ্রপুর, মহারাজপুর, লক্ষিপুর, গোপীনাথপুর, বৃকাশো, খামারপাথুরিয়া, নওপাড়া, বৃগড়িলা, বৃপাথুরিয়া এবং চাকলের বিলের পানি নিস্কাশিত হতো।
এখনও মুরব্বিদের কাছে শোনা যায়, তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী দিয়ে এক সময় বড় নৌকা, বজরা এবং লঞ্চ চলাচল করতো। এখন সেই নদী ভরাট করে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। সেথায় কৃষি আবাদ ও শাক-সবজির চাষ করা হয়। বড় বড় পুকুর করে মৎস্য চাষ করছে নদী খেকোরা।
যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উপজেলার ওই দুই ইউনিয়নবাসী। আর অবৈধ দখল-দূষণের ফলে তুলসীগঙ্গা ও মির্জামামুদ নদী দিয়ে পানি নিস্কাশনের সুযোগ না থাকায় মহারাজপুর, বৃপাথুরিয়া, বৃগড়িলা, বৃকাশো, পশ্চিম নওপাড়া, বৃচাপিলা, রানীনগর, লক্ষীপুর, খামারপাথুরিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রাম স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে সারা বছর।
এর প্রভাবে চাপিলা ও নাজিরপুর ইউনিয়নের সকল কৃষিজমি, অভ্যন্তরীন রাস্তা, পাকা সড়ক, ফলজ ও বনজ বাগান, শাকসবজির বাগান, বাড়িঘর, স্কুলমাঠ (বৃপাথুরিয়া হাইস্কুল ও প্রইমারী স্কুল, মহারাজপুর মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুল এবং মহারাজপুর বাজার), বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানির নীচে তলিয়ে থাকায় কৃষি আবাদ সম্পূর্নভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে পানিবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে ও মশার উপদ্রপ বেড়েই চলেছে। এমনকি ফলজ ও বনজ বাগানসহ ধ্বংস হয়ে গেছে বাঁশবাগান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলাও বন্ধ হয়ে গেছে। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেন বলেন, নদী দুটি উদ্ধারে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হবে এবং তাদের উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা দরকার।