ইয়ানূর রহমান : ভারতীয় রুপির বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে। গত তিন যুগের মধ্যে বর্তমান সময়ে রুপিকে ধরে ফেলার উপক্রম করেছে বাংলাদেশী টাকা। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ৮৪ রুপি। গত রোববার ছিল একশ টাকায় ৮৬ রুপি। যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ।
অপরদিকে ১০০ রুপির দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকার সামান্য বেশি। আবার লেনদেন হুন্ডির মাধ্যমে হলে এর বেশিও মিলছে। আবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ ভারতের বড় শহরের শপিং মলে বাংলাদেশিদের কেনাকাটাও বেড়েছে। ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বেড়েছে চোরাচালানও। বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে যে উঠা-নামা চলছে তাতে বাংলাদেশী টাকা ডলারের বিপরীতে বেশি দৃঢ়তা দেখাতে পেরেছে বলেই রুপির তুলনায় তার দর বেড়েছে। এর ফলে ১ মার্কিন ডলার প্রতি ভারতীয় টাকার দাম ৭২ টাকা ৩ পয়সা।
কিন্তু বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল ও বনগাঁতে মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের মালিকরা হঠাৎ করে সিন্ডিকেট করে ভারতীয় রুপির দর বাড়িয়ে দিয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার ১০০ বাংলাদেশী টাকার বিনিময়ে ভারতীয় ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দেয়া শুরু করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে ১০০ টাকায় ৮৬ রুপি পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রবণতা বজায় থাকলে বাংলাদেশে ভারতের রফতানি আরও বাড়বে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যারা ডাক্তার দেখাতে, অস্ত্রোপচার করতে, বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে ভারতে যাবেন তাদের জন্য এটা বড় সুখবর কারণ টাকা বদলানোর পর তাদের হাতে নগদ রুপি এখন অনেক বেশি আসবে।
বেনাপোল আমদানি রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, দু’বছর আগে ২০১৩-র আগস্টেও একই রকমভাবে রুপির বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার দাম বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া বেশিদিন স্থায়ী হয়নি, এখন ২০১৯ এসে রুপি-টাকার বিনিময় হার কোথায় এসে দাঁড়াবে তার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে দুদেশের বাণিজ্যের গতি প্রকৃতি।
মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছে, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ভারতে রুপির মান নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ফলে রুপির বিপরীতে টাকার মূল্যমান বাড়তে থাকে। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সংকট, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে রুপির এ দরপতনে বাংলাদেশী টাকার মান বেড়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশি ১০০ টাকায় সমান সমান ভারতীয় ১০০ রুপি পাওয়া যেত। এরপর টাকার মান কমতে থাকে। এক পর্যায়ে তা রুপির চেয়ে অর্ধেকেরও কমে এসে দাঁড়ায়।
এ সপ্তাহে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম একটা সময় পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, অথচ সেই একই সময়ে বাংলাদেশী টাকার বিপীরতে রুপির পতন হয়েছে যৎসামান্য। বর্তমানে রুপির বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার দাম এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে আর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যটা ডলারে হয় বলেই রুপির পতনের প্রভাবটা সীমিত হবে।
তবে সেই সঙ্গে তিনি যোগ করছেন, রুপির দাম কমায় রফতানিকারী হিসেবে ভারতের ‘কমপিটিটিভনেস’ কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু চট করে সেটার সুফল হয়তো বোঝা যাবে না। কারণ এ ধরনের আমদানি বা রফতানির পরিকল্পনাটা হয় অনেক আগে থেকে। অর্ডার ডেলিভারির ছয় মাস আগেই হয়তো দুপক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়ে যায়।
দরপতনের কারণে অনেকেই টাকা দিয়ে রুপি কিনে রাখছে। পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিরাও বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে। একই কারণে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে।
বেনাপোল সীমান্তের ওপারে ভারতের পেট্রাপোলে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী এন বিশাস এন্ড কোং এর প্রতিনিধি সুপ্রদীপ বিশ্বাস ও মহম্মদ এন্টারপ্রাইজের মালিক সুমন মণ্ডল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় ভারতীয় ৮৬ রুপি পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তুু মঙ্গলবার সকাল থেকে বাংলাদেশী ১০০ টাকায় ভারতীয় ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দেয়া হচ্ছে। টাকার মান উঠানামা চলছে৷