পাবনার নারী সাংবাদিক নদী হত্যার এক বছর॥ মামলা তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই

স্টাফ রিপোটার : পাবনার নারী সাংবাদিক সুর্বণা নদী হত্যা মামলার এক বছর অতিক্রান্ত হলো। গত এক বছরেও তদন্তকারী সংস্থা হত্যার মোটিভ উদ্ধার করতে পারেনি। মামলা তদন্তে নেই কোন অগ্রগতি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে এজাহারভুক্ত তিন আসামী প্রাক্তন স্বামী রাজিবুল ইসলাম রাজিব (২৭) তার বাবা শিল্পপতি আবুল হোসেন সামসুজ্জামান মিলন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এ দিকে পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে নদীর একমাত্র মেয়ে জান্নাত (১০) এবং মা মর্জিনা খাতুন (৬০)।
গত বছরের ২৮ আগষ্ট রাতে পাবনা শহরের রাধানগর মহল্লায় বাসার সামনে অনলাইন পোর্টাল দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্না আক্তার নদীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরদিন নিহত সাংবাদিকের মা মজির্না বেগম বাদি হয়ে সুবর্না নদীর সাবেক শ্বশুড় পাবনার শিমলা হাসপাতাল এন্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টার এবং ইড্রাল ফার্মাসিটিউক্যালসের মালিক আবুল হোসেন, সাবেক স্বামী রাজিবুল ইসলাম রাজিব ও তার সহযোগী মিলনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আবুল হোসেন এবং মিলনকে গ্রেফতার করতে পারলেও প্রাক্তন স্বামী রাজিব ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে। পরে রাজিব আদালতে আতœসমর্পন করে এবং জামিন পায়।
নদীর মা মর্জিনা খাতুন বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, “এখন কেউ আর তাদের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না। আমরা পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি, দেখার কেউ নেই। এমনকি নদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ দেওয়ার কোন টাকা নেই। সাংবাদিকরা ২ হাজার টাকা দিয়েছে সেই টাকা দিয়ে কাল মসজিদে মিলাদ দেব। মর্জিনা খাতুন আরও বলেন, আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু এখন শুনছি সে মামলা সিআইডিতে দেওয়া হয়েছে। মামলার ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ জানেন। তিনি বলেন, পাবনার একটি মহল আবুল হোসেন ও তার ছেলে রাজিবকে বাঁচাতে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে।
পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলা এখন সিআইডিতে রয়েছে। এর আগে পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাবনা সিআইডির দারোগা আবুল কালাম আজাদ বার্তা সংস্থা পিপ‘কে বলেন, সিআইডির মামলা এমনিতেই একটু ধীরে চলে। আর এটি হল ক্লুলেস মামলা। তাই রহস্য উদঘাটনে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সিআইডি তদন্ত করে সব বের করবে বলে তিনি জানান।
নিহত নদীর বোন চম্পা দৈনিক খোলাকাগজকে জানান, পরিচয় ও প্রেমের এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৬ জুন ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় নিকাহ রেজিষ্ট্রার শিল্পপতি আবুল হোসেনের একমাত্র ছেলে রাজিবুল ইসলাম রাজিবের সঙ্গে সুবর্ণা আক্তার ওরফে নদীর সঙ্গে ৫ লক্ষ ১ টাকা কাবিননামায় বিয়ে হয়। বছর খানেক বিয়ের কথা গোপন থাকার পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে জানাজানি হলে পারিবারের চাপে বিশেষ করে শশুড় আবুল হোসেনের চাপে রাজিব নদীকে ডিভোর্স দেয়। এর পর থেকে নদী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা স্বামীকে ফিরে পেতে নানা চেষ্টা চালায়। কিন্তু কোথাও কোন সারা পায়নি।
পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান বলেন, ঘটনার এক বছর পরও মামলার কুল কিনারা না হওয়া দু:খজনক। তিনি তদন্তকারীদের আরও আন্তরিক হওয়ার জন্য বলেন।