ইয়ানূর রহমান : সরকারি নির্দেশনার পরও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন না ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা। চিকিৎসার জন্য স্যালাইন, ক্যানোলা, সুপারফিক্সসহ অন্যান্য ওষুধ সামগ্রী স্বজনদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। অনেক রোগীকে মশারিও দেয়া হয়নি।
এদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষার জন্য রশিদ আনতে গেলে ক্যাশ কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে সময় নেই কাল আসেন। চাপ কমাতে ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বরতরা এই অনিয়ম করছেন।
এতে অনেকই বাধ্য হয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা খরচ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের। এ ঘোষণার পর সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানোলা, পরীক্ষার উপকরণ, মশারিও বিনামূল্যে সরবরাহ করে। কিন্তু যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে হচ্ছে তার উল্টোটা। এখানে বাইরে থেকে কিনে আনা ওষুধ সামগ্রীতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদিন ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮ জন। বর্তমানে ১২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
অধিকাংশ রোগীর স্বজন বলছেন, সরকারি এই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।
মণিরামপুর উপজেলার পলাশী গ্রামের আমিনুর রহমান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার শাশুড়ি শরিফা খাতুন জানান, গত বুধবার ভর্তি হওয়ার পর থেকে তারা সকল ওষুধ সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে এনেছেন। হাসপাতাল থেকে তার রোগীকে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল দেয়া হচ্ছে। রোগীর স্বজন হানুফা বেগম, জয়নাল আবেদীন, শরিফুল ইসলামও একই অভিযোগ করেন।
ডেঙ্গু কর্ণারে গিয়ে দেখা গেছে, সবার শরীরে বাইরে থেকে কিনে আনা স্যালাইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিনামূল্যে ওষুধ স্যালাইন চাইলে তাদের বলা হচ্ছে সাপ্লাই নেই। বাইরে থেকে কিনে আনেন। পরবর্তী কথা বাড়ালেই খারাপ আচরণ করা হচ্ছে। এছাড়া মশারি ছাড়াই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকই।
একাধিক স্বজন জানান, রোগীর সংখ্যা যতো বাড়ছে ততই চিকিৎসক সেবিকাদের অবহেলা বাড়ছে। অনেক সময় তাদের সাথে দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। কয়েকজন ওয়ার্ড ইনচার্জ সেবিকা জানান, নরমাল স্যালাইন চেয়ে কয়েকবার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু নেই বলে জানানো হচ্ছে। যে কারণে তারা স্যালাইন কিনতে স্লিপ লিখে দিচ্ছেন।
তারা আরো জানান, রোগীর তুলনায় মশারি কম। তাই সব রোগীকে মশারি দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। স্টোর কিপার শরিফুল ইসলাম জানান, তার কাছে ৫০০ স্যালাইন ছিলো। যা ঈদে তিন আগে শেষ হয়ে গেছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে স্যালাইন দেয়া সম্ভব হয়নি। রোববার মন্ত্রনালয়ে যাবো স্যালাইন আনার জন্য।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মাইক্রোপরে আঠা কম হওয়ায় আটতে চায়না। তাই রোগীদের জন্য সুপারফিক্স কেনানো হচ্ছে।
মণিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের ফল বিক্রেতা রনজিৎ জানান, ২১ আগস্ট তার ছেলে অভিজিৎ (১৮) জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরের দিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে এনএস-১, সিবিসি ও ইউরিন পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনি ছেলেকে নিয়ে শনিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টারে যান। সেখানে দায়িত্বরত হাতে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। এ সময় তারা বলেন সময় শেষ এখন আর ডেঙ্গু পরীক্ষার রশিদ দেয়া যাবে না। পরীক্ষা করাতে আগামীকাল (রোববার) আসবেন।
রনজিৎ আরো জানান, কথাগুলো বলার পর তিনি ক্যাশ কাউন্টারে দায়িত্বদের বলেন লেখা আছে ১২টার পর টিকিট জমা নেয়া হয় না। এখনতো ১১টা বাজে। তাহলে কেনো জমা নেবেন না। আমার ছেলের জ্বর বাড়ছে পরীক্ষা করা জরুরি বলা হলেও কর্ণপাত করা হয়নি। পরে তিনি একটি ক্লিনিকে গেলে ওই তিনটি পরীক্ষা বাবদ তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। রিপোর্টে তার ছেলে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রনজিৎ জানান, এদিন তার মতো অনেকের টিকিট জমা নেয়া হয়নি ক্যাশ কাউন্টার থেকে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, বিনামূল্যে ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্যালাইন শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। অবশ্যই এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।