মূলত যাদের দৃষ্টিশক্তি কম চশমা তাদের কাছে খুব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। আমাদের চারদিকে কী ঘটে যাচ্ছে তা আমরা যতটা দেখে উপলব্ধি করতে পারি তা আর কোনো ভাবেই পারি না। তাই চোখের সুরক্ষায় আমরা চোখে চশমা ব্যবহার করি। তবে ইদানীং অনেকেই ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নানা কায়দার বাহারি চশমা পরে থাকেন।
এটি বর্তমানে ফ্যাশনের যেমন একটি অংশ তেমনি আপনার চোখকে বাইরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। তবে কারণ যাই হোক না কেন, চশমা এখন বেশির ভাগ মানুষেরই নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।
আমরা অনেকেই জানিনা চশমার ব্যবহার শুরু হয় কবে থেকে? তবে জেনে নেওয়া যাক চশমার আবিষ্কার, প্রচলন ও বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে।
হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে চিত্রিত বর্ণনায় প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় চশমার ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন ইতিহাসবিদেরা। মিসরীয় সভ্যতায় কাচ ও আতশ কাচের ব্যবহারের প্রমাণও মিলেছে। তবে তাকে আধুনিক চশমার আদি রূপ বলা যায় না। আধুনিক চশমার উদ্ভাবন ও ব্যবহারের প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ইতালিতে। দ্বাদশ শতকে একটি কাঠের ফ্রেমে দুটি কাচ আটকে প্রথম দৈনিক ব্যবহারের জন্য চশমার উদ্ভাবন ও ব্যবহার শুরু হয়। তখন চশমা সব সময় হাতে ধরে থাকতে হত।
ইতিহাসবিদদের অনুমান, ১২৮৬ সাল নাগাদ ইতালির এক ধর্মপ্রচারক, সংস্কারক জিওর্দানো দ্যা পিসা চশমার নকশাকে আরও উন্নত করেন। মূলত দৃষ্টি শক্তির প্রতিবন্ধকতার প্রতিকার করার উদ্দেশ্যেই তিনি এটির ব্যবহারকে আরও সহজ করতে চেয়েছিলেন। জিওর্দানো দ্যা পিসার তৈরি চশমার নকশাকে আধুনিক চশমার আদি রূপ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। তবে এই নকশাতেও চশমা সর্বক্ষণ হাতে ধরেই ব্যবহার করতে হত। ধীরে ধীরে চশমার ব্যবহার ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ইতালি ও স্পেনে।
জিওর্দানো দ্যা পিসা চশমার নকশা তৈরির প্রায় সাড়ে চারশো বছর পর চশমার সাবেকি নকশায় পরিবর্তন আসে। দুকানে সঙ্গে জুড়ে যায় চশমার ফ্রেমের দুই হাতলের মতো অংশ। ফলে হাতে ধরে থেকে চশমার ব্যবহারের দিন ফুরিয়ে জন্ম হয় এর আধুনিক নকশার। এই নকশা তৈরি করেন ব্রিটিশ চশমা বিক্রেতা ও বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারক এডওয়ার্ড স্কারলেট। এর পর ধীরে ধীরে চশমার হাতলের মতো অংশে কবজা জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে সেটি ভাঁজ করে রাখা সম্ভব হয়। এর পর ধাপে ধাপে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চশমার নকশা ক্রমশ আধুনিক হয়ে উঠেছে।