নুরজাহান আশরাফী (সুইটি)
বাংলাদেশের জাতীয় শিশুনীতিতে ১৮ বছরের কম ছেলেমেয়েদের কে শিশু বলে থাকে। যা জাতিসংঘের শিশু হিসেবে গন্য করা হয়।
শিশু শব্দটি একটি মমতাময়ী শব্দ যে শব্দের মাঝে লুকিয়ে থাকে কোটি কোটি বাবা-মায়ের øেহ,আদর ও ভালোবাসা।
শিশুর অধিকার :
বাবা-মা সন্তানের জীবনের প্রথম ও সব থেকে বড় শিক্ষক। বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের কল্যান নিশ্চিতকরনের জন্য সাংবিধানিক বিধান ও অনেক আইন রয়েছে। প্রথমবারের মত শিশুর অধিকার সমূহ ১৯২৪ সালে লীগ অব নেশনস এর ৫ম অধিবেশনে গৃহীত শিশু অধিকার আন্তর্জাতিক দলিলে স্থান পায়।
পিতা-মাতার ভালোবাসা :
আমরা সবাই জানি পরিবার হলো শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র। বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দ্বান্দিক আধুনিকতা দেখতে পাই। রানি ভিক্টোরিয়া যুগের শ্রেষ্ট ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স বলেছেন,বদান্যতা ঘর থেকে শুরু হয়। ও নৈতিকতার কেন্দ্রস্থল হলো পরিবার। তাই পরিবারের সদস্য বিশেষ করে মা-বাবার উচিত পাশ্চাত্যরীতি অনুসরনে অনুশাসন যেন তার মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা দানা বাধতে না পারে।
আর্দশ সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা :
শিশুকালই হচ্ছে ভবিষ্যত জীবনের ভিত্তিভূমি। একজন সচেতন বিজ্ঞ মা-ই পারেন তার সন্তানকে যর্থাথ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে একজন শিশুর সবচেয়ে বড় সাথী হচ্ছে তার মা। মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশু তার মাতৃসত্তাকে অনুধাবন, অনুকরন করে। মায়ের মুখের ভাষাই শিশু প্রথম রপ্ত করে মাকে। তাই মাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এ সময়ে শিশু লালন-পালন করতে হয়। মা যত নিষ্টা, আন্তরিকতা ও দরদের সঙ্গে তার শিশুর পরিচর্যা ও লেখাপড়া করিয়ে থাকেন তা আর অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। শিশুর চরিত্র গঠনের দায়িত্বটাও মূলত মাকেই পালন করতে হয়।
একজন চরিত্রবান ও আর্দশ সন্তান গঠনে মায়ের যেসব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার :
বা-মার সম্পর্কে : গভীরতা রুপধারণ যৌথ বা একক যে পরিবারেই সন্তান বেড়ে উঠুক না কেন বা-মার পাশাপাশি আরও অনেকের সাথে যেমন যেমন-খালা, ফুফু, চাচা, চাচি, দাদা, দাদি, নান, নানির আশেপাশের লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হয়। বাবা-মার পাশাপাশি আপনজনদের সাথে মিশে সন্তানেরা পরম পরশ ও যতœ লাভ করে।
মানসিক প্রভাব বিকাশে : শিশুর মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ হয় এমন পরিহার করা মায়ের উচিত। কারন সন্তান কখনো বাবা-মাকে ছাড়া ডে-কেয়ার বা অদক্ষ গৃহকর্মীর কাছে সু যতœ পায় না। এবং কি মায়ের এমন কোন কাজের চাপ যেন সামর্থ্য দিয়ে একান্ত সময় দিয়ে শিশুর মানসিক বিকাশে খেয়াল রাখতে হবে।
অন্যায় পথে অগ্রসর না হওয়া : একটি সন্তান যখন বয়সের সাথে সাথে বড় হতে থাকে তখন সে আশেপাশের অপরিচিত বাচ্চাদের সাথে মিশতে শুরু করে। এভাবে নিজে অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে বা একাকীত্বতা ঘোচাতে ভালো ও খারাপ অনেকের সাথে মিশে যায়। তাই মাকেই সবসময় নজর রাখতে হবে কেমন শিশুদের সাথে আপনার সন্তান মেলামিশা বা খেলাধুলা করছে।
মাতা পিতার সাথে দূরত্ব যেন না হয় : বর্তমান প্রতিযোগিতার এই বাজারে এমনিতেই কর্মজীবিরা ছুটি পাই না। আবার দেখা যায় অনেক পরিবারে মা-বা দুজনেই চাকুরি করেন। কিন্তু মা হিসেবে সবসময় মাথায় রাখতে হবে সন্তানকে যেন দূরত্বে ফেলে না দেন। সন্তানের সাথে একান্ত গল্প করা, ঘুরতে যাওয়া ও পছন্দের কিছু করে খওয়া ইত্যাদির বিষয়ে সন্তান বড় হতে পিতামাতাকেও সময় দিতে হবে যেন মাতা পিতার প্রতি যেন দূরত্ব যেন না হয়।
উন্নত জীবন যাপনে অভ্যস্ত : অনেকের বাবা-মা দুজনেই চাকুরি করে অনেকে হয়ত করে না তাই বলে সন্তানকে ছোট মনমানসিকতায় বেড়ে উঠতে দেয় যাবে না। পারিবারিক স্বচ্ছলতা বজায় রেখে সন্তানের জীবনমানের শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন কি সহশিক্ষা কর্যক্রমেও বেশি বেশি উৎসাহিত করে সন্তানের ভালো ফলাফলে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে হবে। হয়ত তাতে পাল্টে দিতে পাওে তার জীনব চলার পথ।
জীবনের অভিজ্ঞতা আলোচনা করা : প্রতিটি বাবা-মা নিশ্চয় কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইওে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করলে সন্তানেরা তখন জানবে তাদের জীবন সম্পর্কে উপলদ্ধি হবে। সন্তানেরা সঠিক ও পরিপক্ক দৃষ্টি ভঙ্গিতে জীবনকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট হবে।
সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা : বাবা-মার ব্যস্ততার কারনে অনেকে সময় দিতে পারেন না। তাই মায়েরা পারেন বাচ্চাদেরকে সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান দিতে। আরও বুঝাতে পারে সময় একবার চলে গেলে তা আর ফিরে আসে না। এতে বাচ্চারা খুবই দ্রুত সময়ের মূল্য সম্পকে বুঝতে পারে এবং সময় অনুযায়ী কাজ করতে অভ্যস্ত হয়।
স্বাধীন ও আত্ববিশ্বাসী করে তোলা : বাবা-মা হিসেবে সকলের উচিত সন্তাকে স্বধীন হিসেবে গড়ে তোলা। কেননা সন্তানকে বুঝাতে হবে বাবা-মা সবসময় পাশে থাকবে না সকল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে সর্তকতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে কোন কাজে স্বাধীনভাবে ভাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার এমন প্রবনতায় আপনার সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
চাপ মোকাবেলা করতে শিখা : সন্তানের কথা মাথায় রেখে বাবা-মাকে এমন জীবন পরিচালনা করতে হবে যেন বাচ্চারা বুঝতে পারে কিভাবে তাদের বাবা-মা পারিবারিক ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করছে তখন বাবা-মা ও অন্যদের প্রতি তাদের সম্মান আরো বেড়ে যায় এবং পরবর্তী জীবনে তারা দক্ষতার সাথে চাপ মোকাবেলা করে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে পারদর্শী হয়।
নানা-নানী বা দাদা-দাদির সাথে সু-সম্পক স্থাপন : বাবা-মা হিসেবে সব সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমিও এক সময় শিশু ছিলাম। তখন আমিও দাদা-দাদী, নানা-নানীর পিছু ছাড়তাম না। তাই নিজের সন্তানকেও নিজের অনুপস্থিতিতে দাদা-দাদি বা নান-নানিকে সজ্ঞি বানিয়ে দিতে পারি। এতে তাদের থেকে বাচ্চারা দাদা-দাদির সাথে ঘুমাবে, গল্প, খেলা ও বিভিন্ন গল্পের কাহিনীর সূত্রে আপনার অনুপস্থিতিতে দাদা-দাদীই হতে পারে আপনার সন্তানের খেলার বিশ্বস্ত সাথী। বাবা-মা আপনাকে যেমন আদর্শে বড় করেছেন ঠিক তেমনি আপনার বাবা-মা আপনার সন্তানকে সঠিক আদর্শে বড় করবেন যা আপনার সন্তানের সঠিক বেড়ে উঠা ও মানসিক বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ন।
অভ্যস্ত করে তুলুন শখের কাজে : মা হিসেবে শিশুকে এমন কিছু কাজের বা তার শখের কাজ গুলো করতে উৎসাহিত করুন। এটা হতে পারে সন্তানের জন্য দারুন একটা কিছু যা তাকে চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে সাহয্য করবে। এছাড়াও শখের কাজ গুলো তাকে শারীরিক ও সৃজনশীল কাজে আরও বেশি দক্ষ করে তুলবে।
মা হিসেবে আমি কিভাবে চাই : আমিও একজন মা। বাবার থেকেও আমার ভূমিকা অনেক বেশি আমার সন্তানের প্রতি। কারন আমার সন্তানের মনের ভাব যতটুকু আমি বুঝি ততটুকু জন্ম দেওয়া বাবও হয়ত বুঝবেনা। আমি মা হিসেবে চাই আমার সন্তানও একজন আর্দশ, চরিত্রবান ও সুশিক্ষিত সন্তান হউক। আমার ছেলের সুনাম ছড়িয়ে পড়–ক চারদিকে এটাই আশা করি। আর আমি উপরের বিষয় গুলো মাথায় রেখে সন্তান গড়ে তুলতে সব সময় সর্তকতা পালন করি। কারন প্রতিটি মা ই চাই তার সন্তান সমাজের সকল ভাল কাজে অংশগ্রহন করুক, বড় হোক সফলতায়। একজন সচেতন মা ই পারে সন্তানের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে। সকল মা-বাবা ও তার সন্তানের সম্পর্ক হোক আনন্দে ভরপুর।
নুরজাহান আশরাফী (সুইটি)
সহকারী শিক্ষক
ফ্লাইট লেঃ কাইমূল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কুতুবদিয়া, কক্সবাজার।