কোরবানির পশুর চামড়া থেকে পাওয়া গরীব মানুষের জন্য দান করতে হয়
তিন-চার বছর আগেওকোরবানি ঈদের এই সময়টায় পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে রাজধানীর অলিতে-গলিতে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা দেখা যেতো চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোথাও তো চামড়া ক্রয় নিয়ে রীতিমত হুমকি-ধামকি আর হানাহানির ঘটনাও ঘটত।
মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সেই তৎপরতা কমতে শুরু করেছে গতবছর থেকেই। এ বছর তাদের সংখ্যা আরও কমে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় চামড়া নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা মিলছে না। যারা আসছেন, তারাও চামড়ার দাম খুব কম বলছেন। অথচ অন্যান্য সময় কোরবানির পর পরই চামড়া কিনতে ভ্যান নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন পশুর মালিকের দোরগোড়ায়। দামও পাওয়া যেতো ভালো।
রাজধানীর বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখো গেছে, ভালো ও বড় মানের কাঁচা চামড়া বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬শ থেকে ৮’শ টাকায়। আর মাঝারি মানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৫শ টাকার মধ্যে। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেক প্রায়। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মি. নবীন জানান, তিনি নিজে যে গরুটি কোরবানি দিয়েছেন সেটির দাম আশি হাজার টাকা। এই গরুটির চামড়া তিনি বিক্রি করেছেন ৬’শ টাকায়। অন্যদিকে তার বড় ভাইয়ের ১ লাখ ৩০ হাজারে কেনা গরুটির চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮‘শ টাকায়।
ঢাকার বাইরে এই দাম আরো কম। আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সেখানে মাঝারি সাইজের একটি গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়! অন্যদিকে ছাগলের চামড়ার দাম না থাকায় তা মাদ্রাসায় বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
এবার পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কারন খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মুলত আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। তাছাড়া এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া প্রায় কিনছেনই না আড়তদাররা। যারা কাঁচা চামড়া কিনছেন তাদের বলে দেয়া হচ্ছে, চামড়ায় লবন মাখিয়ে রাখতে। আড়তদারদের বেশিরভাগ কাঁচা চামড়া না কেনায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য ঝামেলা এড়াতে চামড়া ব্যবসায় এবার লোকজনও কম নেমেছেন। আড়তদাররা বলছেন চামড়া কেনার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত মুলধনের অভাব রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের গত বছরের পাওনা টাকাই বকেয়া রয়েছে।
চামড়ার দাম পড়ে যাওয়া নিয়ে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এমনিতেই চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। আর অবধারিতভাবেই এর প্রভাব পড়েছে আমাদের ওপর। আর এবার কাঁচা চামড়া কেনার চেয়ে লবনযুক্ত চামড়া কেনার দিকে ঝোঁক বেশি ব্যবসায়ীদের। চামড়া কেনার মতো মুলধনেরও অভাব রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে চামড়ার বাজারে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গতবার রামপুরা এলাকায় কাঁচা চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ী জামিল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, গতবার এলাকায় এলাকায় গিয়ে অনেক কাঁচা চামড়া কিনেছিলাম। কিন্তু লাভবান হতে পারিনি। এবার তো চামড়ার বাজার আরো খারাপ। আড়তদাররা কাঁচা চামড়া কিনছেই না। আগে থেকেই এই ব্যাপারে আড়তদারদের কাছ থেকে সিগনাল পেয়েছিলাম। এজন্য এবার আর এ ব্যবসায় নামিনি।