প্রায় ১৮ বছর পর মা-বাবাকে ইসলামি রীতিতে বিয়ে দিয়ে দিলেন একমাত্র সন্তান। বুধবার (৩১ জুলাই) অভিনব এ ঘটনাটি ঘটেছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। যাকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
আসলে এ বিয়েটা তাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফা। ১৮ বছর আগে হওয়া প্রথমবারের বিয়েতে ছিল না কোনো সামাজিক স্বীকৃতি। যে কারণে সন্তানের মর্যাদাসহ সামাজিক স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন না তাদের একমাত্র সন্তান মিলন।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মেয়ে মালার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একই গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে ইসলামের। যে সম্পর্কের জেরে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের প্রায় ১১ মাস পর ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি তাদের ঘরে জন্ম হয় একমাত্র সন্তান মিলনের।
কিন্তু এরপরই মালার সঙ্গে বিয়ে ও পুত্র মিলনের পিতৃত্ব অস্বীকার করে বসেন ইসলাম। দূরে ঠেলে দেন মা ও সন্তানকে। যার ফলে বাধ্য হয়ে মেয়ের জামাই ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন মালার বাবা। এ মামলায় বিচারিক আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ইসলাম। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ব্যর্থ হন ইসলাম। পরবর্তীতে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন তিনি। সেই রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেত্বত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন। এর আগে মিলনের ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম ও মালাই মিলনের বাবা-মা।
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আপিল বিভাগকে বলেন, মালা যেমন ইসলামেরই স্ত্রী, তেমনি ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত যে মিলন তাদেরই সন্তান। আর এর মধ্যেদিয়ে নিষ্পত্তি ঘটে দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের। ফলে ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ৩১ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পু:নরায় রেজিস্ট্রি বা কাবিনের মাধ্যমে মালা ও ইসলামের বিয়ে সম্পন্ন হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মালা-ইসলামের ১৮ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মিলন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইসলাম জামিন আবেদন করলে মালাকে স্ত্রী ও মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দেয়ার শর্ত দেন আদালত। সে শর্তে ইসলাম রাজি হলে আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বুধবার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুই পক্ষের আত্মীয় স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দিলে আদালত ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন। আদেশের কপি হাতে এসে পৌঁছলে ইসলামের মুক্তি মিলবে বলে জানান জেলার আবু তালেব। সেইসঙ্গে আগামী ২৯ আগস্ট চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিষয়ে অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।