ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশের সার্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি। আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই যেন রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪৭৭ জন। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় ৬২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এটি ছিল সেসময়ের রেকর্ড। চলতি বছরের এখনও পাঁচ মাস বাকি। কিন্তু গত বছরের রেকর্ড ইতোমধ্যে ভঙ্গ হয়েছে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৮৩ জন। শুধু জুলাই মাসেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার (১৪ হাজার ৯৯৬ জন) ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।অস্বাভাবিকভাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর আসন্ন ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ঈদুল আজহার সময় ঢাকার বাইরে যেতে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু জ্বরের পরিস্থিতি যখন এমন জটিল ঠিক তখনই খবর আসে ব্যক্তিগত ভ্রমণে গত ২৭ জুলাই মালয়েশিয়া গেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। চারদিকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমালোচনার মুখে গতকাল বুধবার রাত ১টার দিকে দেশে ফেরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১০০ শয্যার একটি নতুন ওয়ার্ড উদ্বোধন করেন তিনি। নতুন ওয়ার্ড উদ্বোধন শেষে সেখানে চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগীদের খোঁজখবর নিতে দলবল নিয়ে উপস্থিত হন মন্ত্রী। সঙ্গে ডজন খানেক চিকিৎসক-নার্সসহ সংবাদকর্মী ছিলেন। এ সময় মহিলা ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের মশারি তুলে তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে দেখা যায় তাকে। চলে ফটোসেশনও। রোগীর স্বজনরা মুখে কিছু না বললেও তাদের চেহারায় এ সময় বিরক্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ১০০ শয্যার চারটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড উদ্বোধন করতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে উপস্থিত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তিনি ওয়ার্ডগুলোতে গেলে তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও নার্সরা মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তৈরি হয় হইহুল্লোড় পরিবেশ।পৌনে ১১টায় মিটফোর্ডে এসে মন্ত্রী বিল্ডিং-২ এ প্রবেশ করে লিফটে পঞ্চম তলায় ওঠেন।
ভবনে ঢোকার পরই চিকিৎসক, নার্স ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পঞ্চম তলায় উঠে মন্ত্রী প্রথমে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পুরুষ ওয়ার্ড (ইউনিট ১+৫) উদ্বোধনের ফিতা কাটেন। এরপর সেই ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে ওয়ার্ডে ঢোকেন অর্ধশত নেতাকর্মী। ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মিডিয়ার ডজন খানেক সাংবাদিকও।
ওয়ার্ডে মন্ত্রী ঢোকার পরপরই নার্সরা ভেতরে স্লোগান দেয়া শুরু করেন। ওয়ার্ডের ভেতরে শুরু হয় হইহুল্লোড়। এসময় অনেক ঘুমন্ত রোগী জেগে নড়াচড়া শুরু করেন। একসঙ্গে এত মানুষ দেখে রোগীর স্বজনদের চেহারায় বিরক্তির ভাব ফুটে ওঠে।
কোনো রোগীর বেডের সামনে গেলেই নার্সরা দুটি বেডের মশারি চারদিক থেকে তুলে মন্ত্রীকে দেখার ব্যবস্থা করেন। এ সময় সাংবাদিকরা মন্ত্রীর পাশের বেডের রোগীর মশারি তুলে মন্ত্রীর ফুটেজ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ‘স্যার, এদিকে তাকান, এদিকে তাকান’- এভাবে চলে মন্ত্রীর ফটোসেশন।
এরপর আরেক ওয়ার্ডে যান মন্ত্রী। সেটাও পুরুষ ওয়ার্ড। সেখানে এক যুবক রোগীকে দেখে মন্ত্রী বলেন, ‘ইয়াং ম্যান, তোমার আবার ডেঙ্গু হলো কীভাবে?’ আরেক বয়স্ক রোগীকে দেখে তিনি বলেন, ‘কী খবর, ব্যথা কমছে? কোনো সমস্যা নেই। চিকিৎসা নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না…।’