–এবাদত আলী
চন্দ্রাবতী,চিকনাই ও রতœাই নদীর পলিবিধৌত জনপদ পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলা। টেবুনিয়া- সাইকোলা রোডের দেবোত্তরে অবস্থিত এই উপজেলা পরিষদের সামান্য দক্ষিনে দেবোত্তর বাজার। দেবোত্তর বাজার লাগোয়া দক্ষিনে সৈয়দ নাসিরুজ্জামান কর্তৃক দানকৃত জমির ওপর নির্মিত দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন আটঘরিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আহবায়ক আটঘরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হকের আমন্ত্রণে নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে হাজির হলাম।
দিনটি ছিলো ২৮ জুন, ২০১৯ শুক্রবার। ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত আটঘরিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ,ক,ম, মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক বাংলাদেশ টেলিভিশন মালিক সমিতির সভাপতি এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরি পিন্টু। আরো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম। মন্ত্রী আসবেন পিন্টু চৌধুরির ব্যক্তিগত হেলিকপ্টারে।
আষাঢ় মাসের ১৪ তারিখ বৃষ্টি ভেজা সকালে নব নির্মিত কমপ্লেক্স ভবনের পাশেই অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে উপস্থিত হলাম। মন্ত্রী আসবেন বলে পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাগণ সভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। এ যেন মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মালিগাছা ইউনিয়ন কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার হওয়ার সুবাদে কমান্ডের প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সেখানে হাজির হলাম। সভাস্থলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে চেয়ার দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অতিতি বৃন্দ এবং সাংবাদিকদের জন্য পৃথক আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি (এবাদত আলী) ১৯৭৮ সালের ৭ মে আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হবার সুবাদে এবং পবনা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও কলাম লেখক হওয়ায় সুধি সমাজে আমার কিছুটা পরিচিতি রয়েছে। তাই আয়োজকদের অনেকেই সাংবাদিক গ্যালারিতে বসার জন্য অনুরোধ করলেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের আসন ছেড়ে অন্য জায়গায় যেতে মন সায় দিলোনা। তার পরেও পাবনার বরেণ্য সাংবাদিক, সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাবনা জেলা প্রতিনিধি আব্দুল মতীন খান, এনটিভির পাবনা জেলা প্রতিনিধি ও পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক এবিএম ফজলুর রহমান, মাছরাঙা টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান উৎপল মির্জা, পাবনা জেলা প্রতিনিধি শহিদুর রহমান রিজু, সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার আলমসহ পাবনা শহর থেকে আগত সাংবাদিকদের সঙ্গে সঙ্গ দেওয়ার কারণেই সাংবাদিক গ্যালারিতেই আমাকে বসতে হলো। আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, পাবনা জেলা জাসদ সভাপতি আমিরুল ইসলাম রাঙা, সাংবাদিক মোহাম্মদ ইয়াছিন, নুরুল ইসলাম নুরু, মাসুদ রানা, আলহাজ শফি উল্লাহ শফি, ফজলুর রহমান খান, শাহিনসহ আটঘরিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথেও কুশল বিনিময় হলো।
মন্ত্রীর আগমণে সমগ্র আটঘরিয়ায় যেন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আটঘরিয়ার প্রধান প্রধান স্থানসহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন প্রাঙ্গনে বিশাল তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যানার ফেষ্টুন আর বেলুনে ছেয়ে গেছে এলাকাটি। বিভিন্ন স্থান হতে আগত হাজারো মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারি,আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও উৎসুক জনতার পদচারনায় কমপ্লেক্স প্রাঙ্গন তখন মুখরিত। সকলেই মন্ত্রীর আগমণ প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই মিলন মেলা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। ১৯৭১ এর রণাঙ্গনের সাথি এত সংখ্যক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এক সঙ্গে পাওয়া সত্যিই বিরল ঘটনা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে এই আটঘরিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের ভুমিকা ছিলো গৌরবোজ্জল। আটঘরিয়ায় তখন ছাত্র-জনতা এক কাতারে শামিল হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সর্ব প্রথম যুদ্ধে লিপ্ত হন আটঘরিয়া থানার এ এসআই আব্দুল জলিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সুচনা লগ্নে অর্থাৎ ২৯ মার্চ, ১৯৭১ পাবনা সদরের মালিগাছা নামক স্থানে পলায়নপর পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। যার সমাধি নব নির্মিত কমপ্লেক্স ভবনের পাশেই অবস্থিত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎস্বর্গকারি পুলিশ অফিসার আব্দুল জলিলের নাম পাবনা পুলিশ লাইনস স্মৃতিস্তম্ভে ১ নং ক্রমিকে এবং ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার স্মৃতিস্তম্ভে ৫ নং ক্রমিকে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পাবনার ভূতপুর্ব পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের প্রচেষ্টায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এএসআই শহীদ আবদুল জলিলের নামে পাবনা পুলিশ লাইনস এর অডিটরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু মালিগাছা রণাঙ্গনের স্মৃতিস্তম্ভের কাজ এখনো অসমাপÍই রয়ে গেছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে আটঘরিয়া থানার পিস কমিটির দালাল মৌলভী আব্দুল লতিফ ওরফে লতিফ মওলানা, থানার রাজাকার কমান্ডার মোমিন, রাজাকার মজিবর রহমান ঠান্ডু, রশিদ, আবু তালেব রাজাকার প্রমুখ ব্যক্তি এবং গোড়রী- ফৈলজানার নাথু পাটনী আটঘরিয়া থানার গোড়রী গ্রামের হিন্দুদের উপর পাকিস্তানি আর্মিদের দ্বারা অকথ্য নির্যাতন চালায়। এই খবর পাবার পর ঈশ্বরদীর ওয়াছেফ কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি মুক্তিযোদ্ধা দল ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার সময় নাথু পাটনীর বাড়ি আক্রমণ করে। এতে বেশ কিছু রাজাকার হতাহত হয়। ২২ অক্টোবর বেরুয়ানে রাজাকারদের সাথে মুক্তি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হায়দার আলী ও তোয়াজ উদ্দিন মাষ্টার শহীদ হন।
নভেম্বর মাসের ৬ তারিখে খিদিরপুর বংশিপাড়া নদীর ঘাটে পাকিস্তানি আর্মিদের সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে ১১জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। । অপর পক্ষে আর্মি ক্যাপ্টেন তাহির খানসহ বহসংখ্যক আর্মি নিহত হয়।বাকিরা পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। পাকিস্তানি সেনারা থানার রজাকারদের সহযোগিতায় আটঘরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষীপুর, শ্রীপুর ও কৈজুড়ি গ্রামে হামলা চালায়। তারা লুট-তরাজ, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যায় লিপ্ত হয়। এদিন রাজশাহী বেতার শিল্পী এমএ গফুরসহ ২৮ জন হিন্দু মুসলমানকে হত্যা করে ইছামতি নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধারা বেলদহের যুদ্ধে অংশগহণ করে এবং ১২ ডিসেম্বর আটঘরিয়া থানা আক্রমণ করে। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আটঘরিয়া থানা হানাদার মুক্ত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিলো। অস্থায়ী হেলি প্যাডে নেমে মন্ত্রীর গাড়ি বহর সোজা দেবোত্তর কমপ্লেক্সের পাশে এসে থামলো।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নব নির্র্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্প স্তবক অর্পণ করলেন। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করা হলো।এসময় সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করা হয়। এর পর মন্ত্রী মহোদয় ফিতা কেটে মুক্তিযোদ্ধা ভবনের শুভ উদ্বোধন করলেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গ বন্ধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের আগমণ- শুভেচ্ছা স্বাগতম ধনিতে এলাকাটি তখন সরগরম।
যাক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হলো। এর আগে প্রধান অতিথিসহ অতিথি বর্গকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হলো । পাবনার নবাগত জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক কবির মাহমুদের সভাপতিত্বে জনসভা আরম্ভ করা হলো।
এসময় ঈশ্বরদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিমকে তার নিজ বাড়ির সামনে গত ৬ ফেব্রুয়ারি নৃসংশভাবে হত্যার বিচার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ শ্লোগান দিতে থাকে। সেলিম হত্যার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়।
এবার যথারীতি বক্তৃতার পালা। আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক আকরাম আলী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আটঘরিয়া উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক আটঘরিয়ার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন বর্তমানে আটঘরিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১শ ৫৬ জন। মাসিক ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১শ ৩০ জন। তিনি সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা প্রদানের দাবি জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক পবিারকে রেশন প্রদানের ও দাবি জানান। এরপর আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আজিজুর রহমান ফণি মিয়ার নাতি তানভির ইসলাম, তানভিরের পিতা আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র ও আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন বক্তব্য দেন। শহিদুল ইসলাম রতন তার বক্তব্যে আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌাধ নির্মাণের দাবি জানান। তিনি পিন্টু চৌধুরির দৃষ্টি আকর্ষন পুর্বক আটঘরিয়া এলাকায় একটি ইন্ডাষ্ট্রি স্থাপনের ও অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব তার বক্তব্যে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান। আরো বক্তব্য দেন,পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোর্শারফ হোসেন, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম বলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম প্রহরে পুলিশ সদস্যরাই পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলো। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি নাতনিদেরকে অগ্রাধিকার দিবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি ঈশ্বরদীর বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম হত্যার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করারও আশ্বাস প্রদান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিেিটড ও মাছ রাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, একসময় এদেশে স্বাধীনতার ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রি শেখ সহাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীন দেশের নাগরিকরা এখন স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারছে। বর্তমান সরকারের কল্যাণে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বইয়ে পড়তে পারছে। তিনি বলেন জয়বাংলা শ্লোগান কোন দলীয় শ্লোগান নয়। জয় বাংলা স্বাধীনতার শ্লোগান। স্বাধীন দেশের শ্লোগান। সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারিরা এই শ্লোগান অবাধে দিতে পারেন। তাতে কোন বাধা নেই।
সভাপতির বক্তব্যে নবাগত জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, পাবনাতে আমি মাত্র কদিন হলো যোগদান করেছি। আর এ জেলায় এটাই আমার প্রথম সভা তাও আবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের শুভাগমণে। তাই আমি আনন্দিত এবং নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি জয় বাংলা বলে তার বক্তব্য শেষ করলে সভাস্থলে উপস্থিত সকলেই তাকে বাহবা দেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, দেশের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধা বিনা খরচে শতভাগ চিকিৎসা সেবা পাবে। এই সেবা আগামি ১ মাসের মধ্যে চালু করা হবে। সারা বাংলাদেশে একই ডিজাইনে বিভিন্ন স্থানের বধ্যভুমি ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সমুহ সংরক্ষণ করা হবে। আগামি প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যুগ যুগ ধরে মনে রাখতে পারে এজন্য অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের মুক্তিযুদ্ধ কালিন সময়ের স্মৃতিচারণমুলক বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, একবার কোন জিনিষ কাউকে দিলে তা আর ফেরত নেয়া যায়না, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকুরিতে যে কোটা ছিলো তা যেন বহাল রাখা হয় এজন্য সারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে ঢাকায় মহা সমাবেশের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট মুক্তিযোদ্ধার কোটা বহাল রাখার জন্য দাবি জানানো হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত তালিকা তৈরি সম্পর্কে তিনি বলেন, যে যে তালিকায় যেভাবে যাদের নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে সেই তালিকা অনুযায়ী যাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তাদেরকে সনদ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো সেই সকল রাজাকার আল বদর, আল শামসদেরও তালিকা করা হবে।
মন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করলে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কথা মনে পড়ে গেল, যখন ভাঙলো—-। ভাঙলো মিলন মেলা ভাঙলো. . .।
এবার যার যার গন্তব্যে ফিরবার পালা। (লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট)
এবাদত আলী, সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব, মোবা: ০১৭১২২৩২৪৬১, ঊসধরষ: বনধফধঃধষর ১৯৭১ @ মসধরষ.পড়স ৩০/০৭/২০১৯ .