জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের বিধান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়, পরস্পর মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবনযাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখনই আসে তালাকের প্রশ্ন।
কোনো কারণে স্বামী বা স্ত্রী যদি তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে আগে কিছু বিষয় অবশ্যই জানা জরুরি। তালাক দেয়ার জন্য মধ্যে কিছু আইনগত বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। যে কারণেই হোক না কেন তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবং তালাক কার্যকরের আগে কিছু নিয়ম মানতে হয়। বিশেষ করে তালাকের নোটিশ পাঠানোর বেলায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসব নিয়ম যথাযথ না মানলে তালাক কার্যকরে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
তালাক কী?
পারিবারিক জীবন অনেক ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায় তিক্ত ও বিষক্ত। একজনের মন যখন অন্যজন থেকে এমনভাবে বিমুখ হয়ে যায় যে, তাদের শুভ মিলনের আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। ঠিক তখনই বিয়েবিচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে ইসলামে।
তবে অনেকে জানতে চান স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে কী তালাক দেয়া যায় বা স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় কী তালাক কার্যকর হয়।জেনে রাখা ভালো স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্ত্রী তালাক দেয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকরী হবে না।
মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- ‘কোনো পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোনো পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দেবেন’ অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরিয়ত প্রবর্তিত তালাকসংক্রান্ত বিধানাবলি ভালোভাবে জানা ও বোঝা খুবই জরুরি। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে তালাক
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। এ ক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকর হবে৷ অর্থাৎ স্ত্রী গর্ভবতী হলে, সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। তবে মনে রাখতে হবে এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পূর্ণ ভরণপোষণ পেতে আইনত হকদার।
সন্তানের দায়ভার
তালাকের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। এ ক্ষেত্রে ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে৷ তবে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবা বহন করবে৷