সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মরদেহ রংপুরের পল্লীনিবাসে নয়, ঢাকার সামরিক কবরস্থানেই দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই ও পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
মঙ্গলবার সকালে এরশাদের মরদেহ তার নিজের এলাকা রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ দুপুরে রংপুরে জানাজা শেষে রাজধানীর বনানীতে সেনা কবরস্থানেই দাফন হবে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। ‘উনার শেষ ইচ্ছানুযায়ী বনানীতে সেনাবাহিনীর কবরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হবে। এই কবরস্থান ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় হলেও যেকোনো সময় যে কেউ সেখানে যেতে পারেন’-যোগ করেন জি এম কাদের।
এদিকে এরশাদের স্মৃতিবিজরিত রংপুরের নেতাকর্মীরা তাকে সেখানেই দাফন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে এরশাদের রংপুরের বাড়ি পল্লীনিবাসের লিচুবাগানে তারা কবরও খুঁড়ে রাখা হয়েছে।
চতুর্থ জানাজার জন্য রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে এরশাদকে বহনকারী হেলিকপ্টার। বেলা সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পুরাতন বিমানবন্দর থেকে এরশাদের কফিন নিয়ে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। সেখানে তার চতুর্থ নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে।
বেলা ১১টায় এরশাদের মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার রংপুর সেনানিবাসের হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তাকে নেয়া হবে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং তাকে শেষবারের মতো দেখবেন। বাদ জোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
এরশাদের মরদেহবাহী কফিনের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাচ্ছেন তার ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের, এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, আজম খান, এটিইউ তাজ রহমান ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
রংপুর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন এরশাদের অন্তিম চাওয়া ছিল তাকে রংপুরেই দাফন করা হোক। সে জন্য পল্লী নিবাসের লিচুতলায় কবর খনন করা হয়েছে। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, জানাজা শেষে স্যারের (এরশাদ) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পল্লী নিবাসে। সেখানে লিচুতলায় তাকে দাফন করা হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
রংপুরের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ‘যেকোনো মূল্যে’ এরশাদের মরদেহ রংপুরে রেখে দেবেন। এরশাদকে রংপুরেই দাফন করা হবে।
মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আরও বলেন, এরশাদের অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী তার নিজ হাতে গড়া পল্লী নিবাসে রোপিত লিচু বাগানের নিচেই হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরশাদের লাশ যদি রংপুরে না আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তবে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে এরশাদকে রংপুরে সমাহিত করা হবে বলে জানান তিনি।
এরশাদের কবরের স্থান নির্ধারণ নিয়ে রশি টানাটানিকে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে বলেন, মানুষ থেকে আলাদা করার এরশাদকে একটি জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় কবর দেয়ার চক্রান্ত চলছে তা প্রতিহত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এরশাদ জেলে থাকা অবস্থাতেও রংপুরের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে রংপুর সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা গিনেস রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন। রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় এবং বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরে চতুর্থ জানাজা শেষে আজ তাকে দাফন করা হবে।