সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেন সিরাজ

মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুনসহ দুইজনের সাক্ষগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।

রোববার (১৪ জুলাই) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের সাক্ষগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানসহ ১৫জন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

মামলার বাদী পক্ষের কৌঁসুলী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, বিজ্ঞ আদালতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন ও একই মাদরাসার দপ্তরি মো. ইউসুফ আদালতে সাক্ষপ্রদান করেন। পরে আসামি পক্ষের কৌঁসুলীরা তাদের জেরা করেন। আদালত ১৫ জুলাই (সোমবার) মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন মাদরাসা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন, চালক নুরুল করিম ও সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিনকে আদালতের উপস্থিত থেকে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য নির্র্দেশ দিয়েছেন।

সাক্ষ্য প্রদান কালে শেখ আবদুল হালিম মামুন বলেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক বৈঠকে আমি নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করি কিন্তু অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তা সরাসরি নাকচ করে দেন। অধ্যক্ষের কার্যালয় শিক্ষক মিলনায়তনের পাশ থেকে সাইক্লোন সেল্টারে নিয়ে যাওয়ারও বিরোধীতা করি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় পর্যাক্রমে নুসরাতের বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা, মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও শিক্ষক আবুল খায়ের আদালতে সাক্ষ প্রদান করেন। আজ (রোববার) মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর শেখ আবদুল হালিম মামুন ও মাদরাসার দপ্তরি মো. ইউসুফ সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম’র (২০) সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে চার্জশিট প্রদান করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।