৫০ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন নাটোরের গরিবের ডাক্তার মজিবুর রহমান

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের মজিবুর রহমানের নিজ উদ্যাগে গড়ে তোলা পল্লী জাগরনী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নিভৃত পল্লীর দুস্থ মা ও শিশুর সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার আশা জাগিয়েছে । র্দীঘ পাঁ দশক ধরে গর্ভবতী ও শিশুদের এই কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছে । মজিবর রহমান নিজেই এ কেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসক । এলাকাবাসীঅ জানান, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো কাজে নেমেছেন মজিবর । প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদের নিরক্ষর , কুসংস্কার আছন্ন মা ও শিশুর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেন এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান । সোনাপাতিল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ”বারণই ”নদীর কোল ঘেঁষে ছোট একটা মাটির কুঁড়ে ঘরে চলছে চিকিৎসাসেবা। । এই মাটির চেম্বার ছাড়াও রাস্তাঘাটে অসুস্থ রোগি দেখলেও চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন ।
পাঁচ দশক ধরে বিনামূল্যে এই কাজ করে যাচ্ছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ডাঃ মজিবুর রহমান।১৯৬৭-৬৮ সালে মাধবপুর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে গুটি বসন্তে মানুষের মৃত্যু দেখে পণ করেন, মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। সেই ব্রত নিয়ে রাজশাহীতে রেডক্রস, ইপিআই-এর প্রশিক্ষণও নেন। সেই থেকে গত ৫০ বছর ধরে চলছে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা । মুক্তিযুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পতিরাম শরণার্থী শিবির ও যুদ্ধশিবিরে রেডক্রসের সদস্য হিসেবে কাজ করেন।এলাকাবাসী জানান, এলাকায় তিনি গরীবের ডাক্তার বলেই পরিচিত। তার কাছে গিয়ে বিনা পয়সায় সেবা পেয়ে খুশি দরিদ্র মানুষ।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার রামশাকাজীপুর এলাকার গৃহবধু রোজিনা খাতুন জানান, মজিবর ডাক্তার গরীবের বন্ধু । গরীবকে খুব ভালোবাসে । আমি গর্ভবতী থাকা অবস্থা থেকে দুটি সন্তানের জন্ম হওয়া পর্যন্ত তার কাছেই বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছি । তার হাত জোস খুব ভালো ।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের গৃহবধু মালা বেগম বলেন , ডাঃ মজিবর রহমান বিনা পয়সায় খুব যতœ সহকারে চিকিৎসা করেন । দূর দূরান্ত থেকে অনেক গর্ভবতী ও প্রসূতি মা মজিবর রহমানের চেম্বারে আসে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে । সমস্যার কথা শুনে সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন তিনি।
নাটোরের বাসুদেবপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক রাজিব সরকার বলেন , ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এমন কথা বলেই মনে হয়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যদি মানুষের হৃদয়ে মায়া মমতা বিচার বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি না করতো তবে এসব কথা ইতিহাসের পাতায় আসত না। আর এ মূল্যবান কথাটির যথার্থ খুঁজে পাওয়া যায় ডাঃ মোঃ মজিবুর রহমানের এর জীবন আদর্শে। মানুষের সেবার জন্য ঘর সংসার করেননি । চিরকুমার এ মানুষটি গরীব ও দুঃস্থ মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎস্বর্গ করেছে ।
গণমাধ্যমকর্মী আল মামুন জানান , সারাজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করাই ছিল যার ব্রত। নাটোরের নলডাঙ্গার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন ডাঃ মজিবর রহমান । লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে মানবিক মূল্যবোধ স¤পন্ন এমন মানুষ সাধারণত পাওয়া যায় না।তিনি তার গ্রামের দরিদ্র মানুষকে সবসময় তার সাধ্যমত বিনা পয়সায় চিকিৎসা এবং ওষুধ দিয়ে থাকেন। এছাড়া প্রতিবছর একবার তিনি সহস্রাধিক দরিদ্র ব্যক্তিকে ওষুধসহ ব্যবস্থাপত্র দেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ ।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাটোরে নলডাঙ্গা , রাজশাহীর পুঠিয়া ও দূর্গাপুর এবং নওগাঁর আত্রাই উপজেলার দূর দূরান্ত থেকে থেকে কয়েক শ” মা ও শিশু সেবা নিতে ভীড় করে গরীবের ডাক্তারের মাটির চেম্বারে । । এই ঘরে দেওয়ালে পাটল দেখা দিয়েছে । ঘরটির দেওয়ালে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় সেটা এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় গরীবের ডাক্তার মজিবুর রহমানের সাথে । তিনি বলেন মানবসেবার ব্রত নিয়ে চলছে তাঁর চিকিৎসা কার্য়্যক্রম । ব্যক্তিগত কোন প্রত্যাশা নেই । চিকিৎসাটা প্রথমত হলো সেবা । তারপরে ঔষুধ ।চিকিৎসা সেবার কোন বিনিময় হয়না বলে তিনি মনে করেন। সেবা করতে গিয়ে মজিবুর নিজের সুখ শান্তির কথা ভাবেননি । ব্যক্তিগতভাবে তার কোন চাওয়া পাওয়া নেই ।
এলাকাবাসী জানান, গরীবের ডাক্তারের জরাজীর্ণ চেম্বারটি সংস্কার এবং নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি । চেম্বারটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান তারা ।
নাটোর নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি জানান,তিনি যেখানে চিকিৎসা সেবা দেন স্থানটি জরাজীর্ণ । উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি গরীবের ডাক্তারের চেম্বারটা সংস্কার করে ব্যবহারে উপযোগী । নাটোরেরর নলডাঙ্গার মজিবুর রহমানের মতো সারা দেশে গরীবের ডাক্তারের সংখ্যা বাড়–ক । মানুষের পাশে দাঁড়াক মানুষ এমন প্রত্যাশা সবার।