হজ এমন এক ইবাদত যেখানে রয়েছে একই সঙ্গে দৈহিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের সমন্বয়। হজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দাদের স¤পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। আনুগত্যের বহুমুখী তৎপরতায় বিগলিত হয় হাজীদের হৃদয়। আল্লাহর সামনে দীনতা-হীনতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে আলোকিত হয় তাদের মন। হজের মধ্যে আল্লাহ তায়লা রেখেছেন দুনিয়া ও আখিরাতের নানাবিধ কল্যাণের বিপুল সমারোহ; যা মুসলিম মানসকে করে সমৃদ্ধ, চেতনাকে করে অনুপ্রানিত এবং আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্যে শৃঙ্খলিত করে দৈনন্দিন জীবনকে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ, ওমরাহ পূর্ণ কর।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৬।
হজ তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম
হজের সকল কার্জক্রমের মধ্য দিয়ে অপরাধ মুক্ত জীবন-যাপন করার ও তাকওয়া অর্জন করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হজের কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে যে লোক হজের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার পক্ষে স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া জায়েজ নয়। না অশোভন কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ করা হজের সেই সময় জায়েজ নয়। আর তোমরা যা কিছু সৎকাজ কর, আল্লাহ তো জানেন। আর তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে নাও। নি:সন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভীতি।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৭।
আল্লাহ তায়ালার অনুপম আনুগত্য
হজের সকল কর্মকান্ডেই সু¯পষ্টভাবে ফুটে ওঠে ইসলামের প্রতি প্রবল আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। হজের পবিত্র ভ‚মি মক্কাতে এসেই ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.) তাদের নিজেদের জন্য ও অনাগত প্রজন্মের জন্য অনুগত মুসলিম হওয়ার দোআ করেছিলেন এভাবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। সূরা বাকারাহ, আয়াত ১২৮।
হজ একটি আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ
হজের মাস এলে আল্লাহ প্রেমিকদের মন পাগলপারা হয়ে ছুটে যায় বায়তুল্লার চত্বরে। আধ্যাত্মিকতার বারিধারায় অবগাহনের জন্য হজ একটি অনন্য পদক্ষেপ। হজের প্রতিটি কর্মশালায় ফুটে উঠে পাগল ভেষী প্রেমিকের আচারণ। হজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার স¤পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ হয় যে, বান্দা দুনিয়ার সকল স¤পর্ক ছিন্ন করে সমস্ত সাজ সজ্জা পরিহার করে সকল আমিত্ব অহমিকাকে দূরে ঠেলে দেয়। বান্দা শুধু আল্লাহর প্রেমে মত্ত হয়ে শুধু আল্লাহকেই চায়। কখনো আস্তে চলে, কখনো দৌড়ে চলে, কখনো চিৎকার করে তালবিয়া পাঠ করে, কখনো মাঠে গিয়ে রাত্রি যাপন করে, কখনো নিজের কৃতকর্মের কথা স্মরণ করে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয় এই ভাবে সে আল্লাহর প্রেম নিবেদন করতে থাকে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও আস্থা ভাজন হওয়ার জন্য সে তার জীবনের সব আকুতি ঝেড়ে দেয়।
সাম্য মৈত্রী হজের শিক্ষা
হজ কোন অঞ্চল ভিত্তিক, দেশ ভিত্তিক উৎসব বা আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। বিশ্বমুসলিম উম্মার একটি গনজমায়েতের নাম হজ। সকল সংকৃণতা সীমাবদ্ধতার উর্ধে উঠে দেশ জাতি বর্ণ নির্বেশেষে সার্বজনিন একটি ইবাদাত। এখানে নেই কোন বর্ণবৈষম্য বা বর্ণবাদী কার্জকালাপ। সাদা-কালো, ধনি-গরিব, আমির-ফকির সবার জন্য একই পোষাক। থাকার জায়গাও এক। কার কতো ক্ষমতা কার কতো স¤পদ এর কোন প্রতিযোগিতার স্থান এটা নয় বরং কে কত বেশি আল্লাহর অনুগত্য ও গোলামী করতে পারে তারই যেন প্রতিযোগিতা চলে। সবাই তার অপারগতা ও অক্ষমতা তুলে ধরতে ব্যাস্ত। কারো দিকে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। সকল মুসলমান এক জাতি একই মায়ের সহোদর এর বাস্তব প্রমান উপস্থাপিত হয়। সবাই মানুষ সবাই আল্লাহর গোলাম এটাই তাদের পরিচয়। সবার কণ্ঠে আল্লাহর বড়াত্ব উচ্চারিত হতে থাকে। দৃষ্টি থাকে কাবার দিকে, জয়গান শুধু আল্লাহার অন্য কারো নয়।
হাজীদের পুরুস্কার
হাজীদের জন্য রয়েছে অবারিত ক্ষমা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায় করলো এমন অবস্থায় যে, কোন প্রকার কাম, প্রবৃত্তি চর্চা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকেনি, সে এমনভাবে হজ শেষে ফেরত আসবে যেমন নবজাতক শিশু মায়ের পেট থেকে (গুনাহমুক্ত অবস্থায়) ভ‚মিষ্ঠ হয়।’ বুখারি, হা/১৪৪৯)। হাজীদের জন্য ক্ষমার পাশাপশি রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রূতি। ইরশাদ হয়েছে, ‘মাবরুর বা কবুল হজের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত।’ বুখারি, হা/১৬৮৩।
হজের পুরুস্কার
হজের বড় পুরুস্কার হলো বান্দার জীবনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায় করলো এমন অবস্থায় যে, কোন প্রকার কাম, প্রবৃত্তি চর্চা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকেনি, সে এমনভাবে হজ শেষে ফেরত আসবে যেমন নবজাতক শিশু মায়ের পেট থেকে নি®পাপ অবস্থায় ভ‚মিষ্ঠ হয়।’ (বুখারি : ১৪৪৯)। আরেকটি হাদীসে তিনি ইরশাদ করেছেন, মাবরুর হজের প্রতিদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত।’ (বুখারি : ১৬৮৩)। মূলত: মাবরুর হজ হচ্ছে ঐ হজ, যা আদায় করার সময় হাজী সকল প্রকার গুনাহ বা নিলর্জ্জ কাজ থেকে বিরত থাকে। দুনিয়ার কোন স্বার্থ হসিল ও সুনাম-সুখ্যাতী তার লক্ষ্য থাকে না। সেলফির মত অনর্থক, অহেতুক ও অবান্তর কোন কার্যকালাপেও থাকে না তার অংশগ্রহন। এ ধরনের মাবরুর হজ আদায় করতে পারলেই আল্লাহ তায়ালা হাজীর জীবনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জান্নাতের মহান পুরুস্কারে ভুষিত করবেন।