হাজার হাজার মানুষের অপেক্ষা, টিউবওয়েলের সঙ্গে পাইপ লাগিয়ে উপর থেকে সেই পানি ছেটানো হচ্ছে। আর নিচের মানুষগুলো ছুটে গিয়ে শরীরটা ভেজাচ্ছেন সেই পানিতে। কেউ কেউ বলছেন রহমতের পানি, তাই তারা ভিজতে পেরেও খুশি। পানির নিচে যাওয়া নিয়েও চলছে হুড়াহুড়ি।
এভাবে শরীরটা ভিজিয়ে নেওয়ার পর এবার অপেক্ষা কখন একটু পানি পাবেন। কেউ নিয়ে এসেছেন কলস আবার কেউ বোতল। এগুলো ভবে পানি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এই দৃশ্য ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোপালপুর (বাজার-গোপালপুর) গ্রামের। ওই গ্রামের পূর্বপাড়া মাঠের মধ্যে সদ্য বসানো একটি টিউবওয়েলের পানি পান করলে বা ওই পানি নিজের শরীরে লাগিয়ে নিলে সব ধরনের রোগ ভালো হয়ে যাচ্ছে। এমনই প্রচারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছেন এখানে পানি পান করতে। নারীর আগমন ঘটছে সবচে বেশি। অবশ্য ভালো হওয়ার বিষয়টি এখনও গুজব, সবাই বলছেন শুনেছেন ভালো হচ্ছে তাই এসেছেন।
অবশ্য সুধিজনরা বলছেন, এটা একেবারেই গুজব থেকে শুরু হয়েছে। কেউ এই গুজনটা ছাড়িয়ে দিয়েছেন, এখন হাজার হাজার মানুষ আসছেন। কিন্তু কারো কোনো রোগ ভালো হয়েছে এমনটি বলতে পারছেন না। সকলেই বলছেন অমকের-তমকের ভালো হয়েছে বলে শুনেছেন।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গোপালপুর গ্রামে দিয়ে দেখা যায় মাঠের মধ্যে একটি মেহগুনি বাগান। সেখানে হাজার খানেক মানুষ অপেক্ষা করছে। যাদের বেশির ভাগই নারী। কিছু বয়োবৃদ্ধ পুরুষ আছে, তবে কিশোর-যুবকের সংখ্যা কম। বেশির ভাগ মানুষ এসেছেন কলস আর বোতল নিয়ে। একদল মানুষ পাইপের মাধ্যমে সবাইকে পানি দিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে পাত্রে দিচ্ছেন, আবার ছড়িয়ে সকলকে ভিজিয়ে দিচ্ছেন।
স্থানিয় রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ২ মাস হলো ইউনিয়ন মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ওরফে জুয়েল মাঠের মধে টিউবওয়েলটি স্থাপন করে দেন। এরপর কিভাবে এই পানি পান শুরু হলো তা বলতে পারেন না। মানুষ বেশি আসতে শুরু করলে চেয়ারম্যান ওই টিউবওয়েলে মটর স্থাপন করে দিয়েছেন। টিউবওয়েলের চারিদিক ইট দিয়ে স্লাব তৈরী করে দিয়েছেন। এখন এখানে হাজার হাজার মানুষ আসছেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের জবেদ আলী জানান, তিনি হাঁপানী রোগে ভুগছিলেন। তাই এই পানি খেতে এসেছেন। অনেকে বলেছে এই পানিতে রোগ ভালো হচ্ছে, তাই এসেছেন। ডাকবাংলা এলাকার রহিমা বেগম এসেছেন পেটের ব্যথা নিয়ে। পানি পেয়েছেন এবং ছেটানো পানিতে গোসলও করেছেন। রোগ ভালো হবে কিনা বলতে পারেন না। বেড়বাড়ি গ্রামের শেফালী খাতুন জানান, তার শাশুড়ী বাড়িতে অসুস্থ। তার জন্য পানি নিতে এসেছেন। আর গোপালপুর গ্রামের এক নারী জানান, তারা কেউ ওই পানি খেতে যাননি।
এ বিষয়ে গোপালপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, একটা গুজব ছড়িয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরপর এখানে বাজার বসবে, কিছু মানুষের ব্যবসা হবে। ছোট ছোট যানবাহনের চালকেরা এই দেখিয়ে মানুষের নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। কিছুদিন এভাবে চলার পর নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হবে। একটা সময়ে বিশৃংখলাও সৃষ্টি হবে। এটা এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। স্থানিয় বাজার-গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঈন উদ্দিন বলেন, এগুলো বিশ্বাস করার কোনো কারন নেই।
চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, তিনি সরকারি বরাদ্ধে এই টিউবওয়েলটি স্থাপন করেন। স্থাপনের ৪ থেকে ৫ দিন পর তিনি শুনেছেন মাঝ রাতে ওই স্থানে কারা নামাজ আদায় করেছেন। তারাই বলে গেছেন এই টিউবওয়েলের পানি খেলে সব ধরনের রোগ ভালো হবে। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ খাচ্ছেন। তিনি নিজেও খেয়েছেন এবং তার কাশি ভালো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এখানো কেউ কোনো ভাবে টাকা আদায় করতে পারবেন না। এ জন্য তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টির খবর পেয়েছেন। ঘটনাস্থলের গিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, এই পানি খেলে রোগ ভালো হচ্ছে এটা কোথা থেকে ছড়ালো, কারা কি উদ্দেশ্যে ছড়ালো সেটাও দেখা হবে বলে জানান।