পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের দেশের দর্শনীয় স্থান ও প্রাচীন স্থাপত্য সমুহের সদ্ব্যবহার করে পর্যটকদের কাছ থেকে আয় করছে বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের স্বার্থে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঐসব দেশের মানুষ ও সরকার সম্মিলিতভাবে কাজ করে বলেই অর্থনৈতীক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি বদ্বীপের দেশ। দেশটির প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বিশেষ করে পর্যটকদের আকর্ষণ রয়েছে। তারা মুগ্ধ হয়ে এ দেশ ভ্রমণে আসে। সত্যিকারার্থেই এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। তাই তো কবি বলেন, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। অথচ, এমন দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আমাদের ব্যর্থতার শেষ নেই। আছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা, রয়েছে সচেতনতার অভাব। বাংলাদেশের প্রচীন স্থাপত্য শৈলী হিসেবে বগুড়া জেলাও পর্যটকদের কাছে কোন অংশে কম নয়। বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলাসহ প্রত্যেক উপজেলায় রয়েছে হাজারও প্রতœতাত্তিক প্রাচীন নিদর্শন ও সম্ভাব্য পর্যটন স্পট। যা কোন এক সময় সরকারের প্রচেষ্টায় পর্যটন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করানো সম্ভব। হতে পারে অর্থনৈতীক আয়ের উৎসের পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান। ধুনট উপজেলার বাইশা বিল ও বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনাও হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। সরকারী ভাবে পর্যটন শিল্প হিসেবে গড়ে তুলে অর্থনৈতীক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার সমস্যার ধমাধান করা যেতে পারে খুব সহজেই। প্রথমেই আসি বগুড়া-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমানের বাড়ির পাশে বাইশা বিলে। এ বিল বগুড়ার ধুনট উপজেলার আকর্ষনীয় ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি। চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের জালশুকা, কুমিরিয়া ডাঙ্গা, চাঁনদিয়ার, চালাপাড়া ও পেঁচিবাড়ী গ্রামের মাঝে এ বিলের অবস্থান। প্রায় ২৫০ বিঘা আয়তনের এ বিল ঘিরে রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। বছর জুড়ে এ বিলে দেখা মেলে দেশী ও বিদেশী নানা জাতের পাখি। পাখির নিরাপদ আবাস হিসেবে দেশি ও বিদেশী পাখির কলতানে মুখর চারপাশ। বিলের দক্ষিণ তীরে রয়েছে নানা প্রজাতীর গাছের বাগান। সবুজ ছায়া ঘেরা সুন্দর পরিবেশে যুগ যুগ ধরে পাখিদের অভয় অরন্য হিসেবে গড়ে উঠেছে এ বাইশা বিল। সংসদ সদস্যের নির্দেশে দীর্ঘদিন যাবত এখানে পাখি শিকার নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কারনে দিনে দিনে পাখির নিরাপদ আবাস হিসেবে গড়ে উঠেছে বাইশা বিল। সারা বছরই প্রায় অতিথি পাখিদের দেখা মেলে এই বিলে। শীতকালে অতিথি পাখির মেলা সে তো আরো অপূর্ব দৃশ্য। সন্ধ্যায় নানা ধরনের গাছে বিভিন্ন প্রজাতীর পাখিদের কলতানে কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান এ পার্ক ঘিরে মুলত প্রকৃতি ও পাখির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দির্ঘদিন ধরে। প্রকৃতি ও পাখির প্রতি ভালোবাসা রেখে মানুষদের সুন্দর পরিবেশের সাথে পরিচিতি করানোর জন্য বাংলা বর্ষবরনের উৎসব ঘিরে মেলা বসে এখানে। এ মনোরম পরিবেশের স্থানটিরও সুন্দর নাম রয়েছে বাবু পার্ক সিটি। এ বাবু পার্ক সিটি বা বাইশা বিলে বেকার সমস্যা সমাধানের কোন পথ হয়তো ভবিষ্যতে সৃষ্টি রহতে পারে। তবে বেকার সমস্যা সমাধোনের পথ সৃষ্টি না হলেও মনের তৃপ্তি মেটাতে পর্যটকদের মন জয় করতে বাইশা বিলের বা বাবু সিটি পার্কের তুলনা নেই। এবার আসি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনায়। এ মহনা হতে পারে সুন্দর একটি সম্ভাব্য পর্যটন স্পট। এখানে প্রতি ঈদ ও পুজোৎসবে বিভিন্ন এলাকার মানুষ তথা পর্যটন প্রেমীরা প্রাকৃতিক সুন্দর্য উপভোগ করতে আসে। বিশেষ করে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর একটু নির্মল আবহাওয়া ও প্রকৃতির মিশে যেতে শতশত লোকের সমাগম ঘটে। বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনায় রয়েছে ভ্রমনের জন্য নৌকা, আছে নির্মল আবহাওয়া ও মনরঞ্জনের মত সুস্থ পরিবেশ। বাজার সংলগ্ন বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনার বুকের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি কলেজ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কাওমী মাদ্রাসা ও একটি দাখিল মাদ্রাসা। এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেই রয়েছে বিলচাপড়ী নদীর সুন্দর্য মন্ডিত জোড়া ব্রিজ ও নির্মল পরিবেশ। যা দর্শনার্থীদের মন জয় করতে ও আনন্দ দিতে যথেষ্ট ভুমিকা রাখে। সরকারের সু দৃষ্টি হলে বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনা হতেপারে সুন্দর পর্যটন স্পট। এখানে আয়ের উৎসের পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধানও হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় বিশিষ্ট জন ও পর্যটন প্রেমীরা।