নির্বাচন সার্চ কমিটির সদস্য হলেন যারা

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম প্রস্তাব করতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে যে দশজনের নাম প্রস্তাব করবে, সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেই কমিশনের অধীনেই হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মো. নূরুল ইসলাম, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান (পিএসসি) মোবাশ্বের মোনেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম।

আইন অনুযায়ী তাদের মধ্যে আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টের দুই বিচারক কমিটিতে এসেছেন প্রধান বিচারপতির মনোনয়নে। সিএজি ও পিএসসি চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এ কমিটির সদস্য। আর বাকি দুজনকে মনোনীত করেছেন রাষ্ট্রপতি।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারকদের তালিকায় জ্যেষ্ঠতার বিচারে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নাম রয়েছে তিন নম্বরে।

১৯৬১ সালের ১৮ মে জন্ম নেওয়া জুবায়ের রহমানের বাবা এএফএম আবদুর রহমান চৌধুরীও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৮ সালে বিচারক হিসাবে ১৫ বছরের কর্মজীবন শেষ করেন তিনি।

জুবায়ের রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

১৯৮৫ সালে তিনি জেলা আদালতের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। দুই বছর পর হাই কোর্ট বিভাগে পেশাগত কাজ শুরু করেন।

২০০৩ সালের অগাস্টে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে নিয়োগ পান জুবায়ের রহমান চৌধুরী। নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সুপ্রিম কোর্টে বড় পরিবর্তনের মধ্যে ১৩ অগাস্ট বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে আপিল বিভাগের বিচারক করা হয়।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান

সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকদের তালিকায় জ্যেষ্ঠতার বিচারে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের নাম রয়েছে দুই নম্বরে।

১৯৫৯ সালের ১ মার্চ জন্ম নেওয়া আসাদুজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করেন।

১৯৮৩ সালে জেলা আদালতে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হাই কোর্ট বিভাগে এবং ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন আসাদুজ্জামান।

২০০৩ সালের ২৭ অগাস্ট হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। দুই বছর পর সেই নিয়োগ স্থায়ী হয়।

২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আয়োজনে ‘অর্থনৈতিক ও আর্থিক অপরাধ’ বিষয়ক সাউথ এশিয়ান জাজেস রিজিওনাল ফোরামে যোগ দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান।

সিএজি মো. নূরুল ইসলাম

অষ্টম বিএসএসের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম ২০২৩ সালের মধ্য জুলাইতে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদে আসেন। সাংবিধানিক এ পদে আসার আগে আড়াই বছর হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা নূরুল ইসলাম কর্মজীবনে সরকারি হিসাব ও অডিট সংক্রান্ত বিভিন্ন পদে দায়িত্ব সামলেছেন।

হিসাব মহানিয়ন্ত্রক থাকার সময় পেশাগত ‘উৎকর্ষ ও সুশাসনে’ ভূমিকার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান তিনি।

অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম ৯ অক্টোবর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।

মোবাশ্বের মোনেম ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে পিএইডি এবং সাসেক্স ও হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেছেন। লোকপ্রশাসন, সুশাসন ও পাবলিক পলিসি নিয়ে তার গবেষণামূলক কাজ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম।

অধ্যাপক সি আর আবরার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক।

তার গবেষণার বিষয়ের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী, অভিবাসী শ্রমিক, বাংলাদেশের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব প্রভৃতি।

এক সময় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সভাপতির দায়িত্বেও সামলেছেন তিনি।

অধ্যাপক জেড এন তাহমিদা বেগম

পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

২০০২ সালের ৯ মে থেকে পাঁচ বছর পিএসসি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যও ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সাদাদলে সামনের সারিতে থাকা অধ্যাপক তাহমিদা বেগম সিনেট, সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ সামলেছেন।