ছাইত্তান ফুলের ঘ্রাণে এখন লালমনিরহাট

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।

হেমন্ত ঋতুর শেষার্ধে ও শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাইত্তান ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের পুরান বাজার রোড। পড়ন্ত বিকেলের সূর্য যখন গোধূলিতে, তখন থেকেই যেন একটু একটু করে ছড়াতে থাকে মায়াবী এ ঘ্রাণ।

শীতের আগে ফোটা সর্বশেষ এই ছাইত্তান ফুলের গাছটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরান বাজারস্থ পিচঢালা রাস্তার পাশে। সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত এই চির সবুজ বৃক্ষের ঘ্রাণ আহরণ করতে পাড়েন পথচারীরা গাছটির আশে পাশে। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসা এ বিপন্ন সপ্তপর্ণী ছাইত্তান ফুলের গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। চিরসবুজ এই বৃক্ষে সাদা ফুলে পুরো গাছ ঢেকে আছে।

ছাইত্তান ফুলেল তথ্য, ছাইত্তান এপোক্যানাসেই গোত্রের উদ্ভিদ। সারাবিশ্বে এর প্রায় ৪০-৬০টি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বড় বড় যে ছাইত্তান গাছ দেখা যায় সেটির বৈজ্ঞানিক নাম আলস্টোনিডা পন্ডিত।

ছাইত্তান গাছের পত্রটি যৌগিক পত্র। এর বৃন্তের গোড়ায় পাঁচ থেকে আট-নয়টি পর্যন্ত পত্রক থাকে। তবে সাধারণত এতে সাতটি পত্রক থাকায় সংস্কৃত ভাষায় একে সপ্তপর্ণ বা সপ্তপর্ণী উদ্ভিদ বলে। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাইত্তান গাছের কাঠকে বলা হয় ‘হোয়াইট চিজ উড’ বা শ্বেত নমনীয় কাঠ। ছাইত্তান গাছকে ইংরেজিতে ডেভিল’স ট্রি বলে। নামটি বাংলা করলে দাঁড়ায় শয়তানের গাছ। এ শয়তান শব্দটি অঞ্চলভেদে বিকৃত হয়ে বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে এটিকে ছয়তাইন্যা গাছ কিংবা ছাতিয়ান, ছাইত্তান, ছাইত্তান্না গাছ নামে ডাকা হয়।গাছটির তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। এ গাছের ফুল ও ফল বন্যপ্রাণী বিশেষ করে বানর-হনুমানরা খায়। কাঠেরও তেমন বাণিজ্যিক মূল্য নেই। জ্বালানী, হালকা আসবারপত্র, লেখাপড়ার ব্ল্যাকবোর্ড, দিয়াশলাইয়ের বাক্স প্রভৃতি তৈরিতে ছাইত্তান গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

ছাইত্তান গাছের বৈশিষ্ট্য: এ গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছটি বহু শাখা বিশিষ্ট। এর ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধুসর। কাঠের রং সাদা। এর কাঠ বেশ নরম। এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। একই মূলাবর্তে ৪-৭টা পর্যন্ত পাতা থাকে। পাতাগুলো ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। চওড়া হয় ২-৪ সেন্টিমিটার। ছাইত্তান পাতা চামড়ার মতো পুরু। এর বোঁটা ০.২৫-০.৬০ সেন্টিমিটার হয়। ছাইত্তানের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাইত্তান গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর থাকে।

ছাইত্তান গাছের ঔষধি গুণ: ছাইত্তানের কষ অনেকে ঔষধিরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। ছাইত্তান গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়ে। দীর্ঘস্থায়ী অতিসার এবং আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী। জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী।

লালমনিরহাটের পুরান বাজার রোডে ফুলের ঘ্রাণ পাওয়া পথচারী হেলাল হোসেন কবির বলেন,ফুল এলাকায় এই ফুলকে ‘ছাইত্তান ফুল’ বলে খুব মিষ্টি গন্ধ মন ভরে যাই বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে পর থেকে মিষ্টি গন্ধে এলাকায় ছড়াতে শুরু করে। আমিসহ পথচারীরা এই ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পেয়ে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই ছাইত্তান গাছ গুলো এক সময় বাংলাদেশে জুড়ে থাকলেও এখন সেটি বিপন্ন হয়ে গেছে।

ফুল প্রমি এস এম হাসান আলী জানান, ছাইত্তান গাছের গুরুত্বও অপরিসীম। ধীর ধীরে ছাইত্তান গাছের মতন সকল গাছ বিপন্ন হয়ে গেলে বিপাকে পরবো।

ফুল প্রেমি হরিপদ রায় হরি বলেন, ছাইত্তান গাছটির বাণিজ্যিক কোন মূল্য নেই বলে নার্সারিতেও ছাইত্তান গাছের চারা পাওয়া যায় না।ছাইত্তানকে কেউ তাদের বাগানে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে লাগায় না। অযত্নে অবহেলায় গাছটি বেড়ে ওঠে। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় গাছটি রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।