ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে মাঠে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। আগামী ২১শে অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলে সাদা পোশাক তুলে রাখার কথা বলেছিলেন দেশের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার। সাকিব হত্যা মামলার আসামি হওয়াতে নিরাপত্তার প্রশ্নে তার দেশে ফিরে সেই টেস্টে অংশ নেয়া অনিশ্চিত। তাই দেশে ফিরতে এবং পুনরায় দেশ ছাড়তে বোর্ডের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন সাকিব। শুরুতে সেই নিরাপত্তা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিল বোর্ড। তবে সেটা থেকে সরে এসেছে বিসিবি। গতকাল মিরপুরে সভা শেষে সাকিব ইস্যুতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে, সাকিবের ভালো সম্ভাবনা আছে দেশে এসে অবসর নেওয়ার।’
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। গত মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন সাকিব। গণহারে মামলার ভিড়ে একটি হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে তাকেও। এছাড়া শেয়ার বাজার কারসাজির অভিযোগে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে সাকিবকে। সব মিলিয়ে সাকিবের বাস্তবতা বেশ প্রতিকূল। এই অবস্থায় সাকিবের দেশে অবসর নিতে চাওয়া পূরণের পথে মূল বাধা তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলা। মামলা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলে কতটা নিরাপদে থাকতে পারবেন এবং নির্বিঘ্নে আবার দেশ ছাড়তে পারবেন কি না, এরকম নিশ্চয়তা তিনি চেয়েছিলেন বিদায়ের ঘোষণার সময়। এরপর থেকেই দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গগুলোর একটি এটি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ গত ২৬শে সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, সাকিব দেশে ফিরলে তার বিদায় রাঙানোর আয়োজন তারা করবেন, কিন্তু তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোর্ড দিতে পারবে না। এরপর গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন, রাজনৈতিকভাবে সাকিবকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। সরকার ও বোর্ডের কড়া অবস্থান দেখে তখন মনে হচ্ছিল, দেশে ফিরে সাকিবের বিদায় নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে বৃহস্পতিবার যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কথায় আবার সুর বদলের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘সাকিবকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে চান, এই অলরাউন্ডারের বিদায় দেশ থেকেই হোক।’
এবার ফারুক আহমেদের কণ্ঠের সুরেও বদলের ছোঁয়া পাওয়া গেল। আইনী জটিলতা দূর করার দায়িত্ব অবশ্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। তবে নিজেদের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে রাখলেন বিসিবি প্রধান। গতকাল বোর্ড মিটিং শেষে ফারুক বলেন, ‘হ্যাঁ, সাকিবের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে, সাকিবের ভালো সম্ভাবনা আছে দেশে এসে অবসর নেওয়ার।’ এরপর সাকিবের নিরাপত্তার ইস্যুতে ফারুক বলেন, ‘লিগ্যালটা তো আমি বলতে পারবো না। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে, আমি তো ছোট মানুষ, বোর্ড প্রেসিডেন্ট। আমার হাতে ক্ষমতা খুব কম। সাকিবের ব্যাপারটা পুরোপুরি সরকার থেকে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সরকার আছে, উপদেষ্টা আছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেওয়ার। আমাদের যতটুকু ক্ষমতা, স্টেডিয়ামের ভেতর ও ইনডোরে যাবে, মাঠে খেলবে, অনুশীলন করতে যাবে; এই দায়িত্ব নেওয়াটা তো খুব সহজ। এটা আমরা নিতে পারবো।’