টানা বৃষ্টিতে পাকেরহাট দেশী মাছ ক্রয়-বিক্রয়ে উপচে পড়া ভিড়, অবাধে দেশী মাছ সংগ্রহে বিলুপ্তির শঙ্কা 

এস.এম.রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট ও আবাদী জমি বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ। এই বৃষ্টিতে মৎস্যচাষী, জেলে ও সাধারণ মানুষরা অবাধে মাছ শিকার করছেন। এতে বেশীরভাগ পোনা আকারের দেশী মাছ ও ছোট মাছ। আর এই মাছ বিক্রি করতে অনেকেই এসেছেন মাছের আড়ৎ ও মাছ হাটি। অবাধে এভাবে ছোট আকারের দেশী মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে খানসামা উপজেলার প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র পাকেরহাট শাপলা চত্বরের পার্শ্বেই স্থায়ী মাছহাটি ও রাস্তার দুই পার্শ্বে দেখা যায়, দেশী ও ছোট মাছের অনেক দোকান বসেছে। এই দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে  ট্যাংরা, কৈ, শিং, মাগুর, গুতুম-বাইম  (আঞ্চলিক ভাষায় গোতা-গছি মাছ), বোয়াল, বাইন, পুঁটি, চোপড়া, টাকি ও শোল প্রজাতির দেশী জাতের মাছ ও বিভিন্ন প্রকার ছোট আকারের মাছ। এসব মাছ ক্রয় করতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়৷ তীব্র তাপ দাহের পর টানা বৃষ্টিতে এসব দেশী প্রজাতির মাছ বাজারে উঠায় ক্রেতাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। এখন বাজারে দেশী মাছের সরবরাহ বেশী থাকায় দাম অন্য সময়ের চেয়ে কম।
জানা যায়, পাকেরহাটে খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি টেংরা ৩০০-৪০০ টাকা, কৈ ৫৫০-৬০০ টাকা, গোতা-গছি ৬০০-৭০০ টাকা, শোল- ৫০০-৭০০ টাকা, টাকি ২৫০-৪০০ টাকা, শিং-মাগুর ৩৫০-৪০০ টাকা, পুঁটি ও চোপড়া মাছ ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খানসামা উপজেলার আত্রাই, ইছামতি ও বেলান নদীসহ বিভিন্ন ডারা, খাল-বিল, পুকুর ও আবাদী জমিতে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই বাঁশের বেড়া, কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী, ভোরং,পলাই, ঢাংগি, ডাড়কি টইয়া, ডিড়ই, বানা, হেঙ্গা ও খোলসুন দিয়ে মৎস্যচাষী, জেলে ও সাধারণ মানুষরা অবাধে দেশী মাছ ও ছোট মাছ শিকার করে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। তবে মৌসুমী অনেকেই নিজ এলাকাতেই মাছ সংগ্রহ করে স্থানীয় ভাবেই বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।
ছাতিয়ানগড় মাদার দরগাহ নামক এলাকায় দেশী মাছ শিকারের সময় আলমগীর নামে এক যুবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে তো দোলায় অনেকেই চায়না জাল বা ভোরং দিয়ে এসব মাছ ধরে কেউ কিছু বলে না। তাই আমিও ধরি।
পাকেরহাট বাজারে দেশী মাছ কিনতে আসা নুর মোহাম্মদ সবসময় তো দেশী মাছ পাওয়া যায় না আর দামও বেশী থাকে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই বাজারে দেশী মাছ পাওয়া যায় ও দাম তুলনামূলক কম। তাই কিনতে আসলাম বাজারে।
পাকেরহাট হৃদয় মৎস্য আড়তের মালিক হৃদয় রায় বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির সময় আড়ত ও বাজারে দেশী ও ছোট মাছের সরবরাহ অনেক বেশী। এতে অন্য সময়ের চেয়ে দামও কম। তাই এসব মাছ কিনতে বাজারে মানুষের ভিড় এখন বেড়েছে।
উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী ইসলাম বলেন, সময়ের সাথে এখন দেশী মাছের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা কমে গেছে। সেই সাথে এখন অবাধে দেশী মাছ ও ছোট জাতের মাছ ও ডিমযুক্ত মা-মাছ ধরা পড়লে ধীরে ধীরে দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হবে । তাই দেশী প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টদের জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মী আখতার বলেন, দেশী মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্যচাষী ও জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে থাকি। তবে জনবল সংকটের কারণে অবাধে দেশী মাছ ও ছোট মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না তবুও সীমিত সামর্থ্য নিয়ে আমরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি। ইতিপূর্বেও কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী দিয়ে অবাধে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন আগামীতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।