ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলকে হেনস্থা করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনে এ ঘটনা ঘটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এটি দ্বিতীয়বারের মতো তাকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য করা হলো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল আওয়ামী পন্থী শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের সমর্থক। বিভিন্ন সময়ে তাকে আওয়ামী লীগপন্থী মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। এর জেরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং তার ক্যাম্পাস ত্যাগের দাবি জানায়। তবে এ আন্দোলনে বাংলা বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী সরাসরি অংশ নেয়নি।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন সঙ্গে কথা বলে অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলকে ক্যাম্পাস ত্যাগের আহ্বান জানায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভাগের সভাপতি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর বিশিষ্ট কলামিস্ট ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক মুঈদ রহমানের স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলকে চরমভাবে হেনস্থা করা হয়। সেদিনও তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, “আমি কষ্ট পেলেও, আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমার হৃদয় ব্যথিত হলেও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ আনবো না। শিক্ষার্থীরাই আমার প্রাণ, তাদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। তাদের অর্জন, তাদের সফলতাই আমার আলো, তাদের মাঝেই আমি আমার উজ্জ্বলতা খুঁজে পাই।”
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা যদি গণতন্ত্রের কথা বলি, তাহলে দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কোনো অন্যায় করলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আছে, উপাচার্য আছেন। যেসব শিক্ষার্থী আজ একজন অধ্যাপককে হেনস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগে বাধ্য করেছে, তারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, “বিষয়টি প্রথম সাংবাদিকদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম। শিক্ষার্থীরা কি একজন শিক্ষকের বিচার করতে পারে? যদি কোনো শিক্ষক অন্যায় করে থাকেন, শিক্ষার্থীদের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করা। শিক্ষকের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে তিনি তখন ব্যস্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে মন্তব্য করবেন বলে জানান। তবে পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি কল রিসিভ করেননি।