সঞ্জু রায়, বগুড়া:
বগুড়ায় হত্যা, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, দখলবাজিসহ ১৭টি’র বেশি মামলার আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার ও তার সহযোগীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের ছোট মন্ডলপাড়া তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে তাদের হত্যা করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে একই এলাকার মুক্তার নামে আরো এক যুবকের কাটা কবজিও পরে থাকতে দেখা যায়।
নিহত সাগর আশেকপুর ইউনিয়নের হাটখোলা পাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা তালুকদারে ছেলে। আর নিহত স্বপন মিয়া একই গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। নিহত সাগরের নামে হত্যাসহ ১৭টিরও অধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার।
জানা যায়, কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২৫/৩০জন সদস্য নিয়ে গঠন করে সন্ত্রাসী বাহিনী। যা সাগর বাহিনী নামে শাবরুল এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। একাধিকবার কারাগারে গেলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের মদদে সে ছাড়াও পেয়ে যেতো। সাগরের তান্ডবে অতিষ্ট ছিলো পুরো এলাকার মানুষ কিন্তু প্রাণ হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না। তবে ৫ আগস্টের পরে খোলস পাল্টিয়ে বিএনপির একাধিক নেতার আশ্রয় নেয়ারও চেষ্টা করছিলো সাগর।
এদিকে সাগরের মৃত্যুর খবর শুনে দূর দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ তার মরদেহ দেখতে ঘটনাস্থলে ভীড় জমান। তবে কারো চেহারায় ছিলোনা কোন শোকের ছাপ সবাই খুশি এ যেন ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে তারা।
স্থানীয়রা জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর সাগর,স্বপন ও মুক্তার একটি মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামের রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাদেরকে এলোপাথারী কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তায় ডোবার পাশে সাগরের লাশ এবং গফুরের বাড়ির উঠানে স্বপনের লাশ পড়ে আছে। রাস্তায় আরো একটি হাতের কব্জি পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের ধারণা সাগরের সাথে থাকা মুক্তার নামের ওই যুবকের হাতের কব্জি হতে পারে। তবে ওই যুবক কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা এখনও জানা যায়নি।
এদিকে নিহত সাগরের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, ‘বিকালে পুকুরে চাষের মাছ দেখার জন্য গিয়েছিল সাগর। ফেরার পথে কে বা কারা জানি তার ছেলেসহ দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তার ছেলের সাথে কয়েকজনের শত্রুতা ছিল জানিয়ে তিনি হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেছেন।’
এদিকে নিহতদের লাশ মর্গে পাঠানোর আগেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসাসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় পুলিশের পক্ষে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, নিহত সাগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে ১৭টিরও অধিক মামলা ছিল। যেহেতু সাগরের নামে একাধিক মামলা ছিল তাই তারা ধারণা করছেন পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা সাগর ও তার সহযোগী স্বপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ও ডিবির টিম টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।